সাব্বির মির্জা (তাড়াশ) প্রতিনিধিঃ
ভূমিহীন পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী স্মৃতি বালাদের জমিজমা নেই। বসবাস করেন সরকারি খাসজমিতে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা বিশ্বদেব সরকার মারা যান। তখন তার ভাই শ্রাবণের বয়স মাত্র সাত মাস।
১৩ বছরের সংসারজীবনে স্বামীকে হারিয়ে স্মৃতির মা শেফালী রানী সরকার দুচোখে অন্ধকার দেখেছেন।
তারপরও তিনি দমে যাননি। বরং একটি সেলাই মেশিনকে সম্বল করে স্থানীয় মাধাইনগর বাজারে দর্জির দোকান খুলে বসেন। আর এ থেকে আয়ে নিজেরসহ দুই ছেলেমেয়ের ভরণ-পোষণসহ লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন।
মেধাবী শিক্ষার্থী স্মৃতি বালা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের কাঞ্চনেশ্বর আঙ্গারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৬ সালে কাঞ্চনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। এরপর ২০১৯ সালে মাধাইনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা জিপিএ ৪.৮৬ পান। পরে রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পান।
পরবর্তী সময়ে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সদ্যঃপ্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় আবারও গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন।
স্মৃতি বালা জানান, ভূমিহীন পরিবারের সন্তান হিসেবে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ন্যূনতম মাসিক এক হাজার ৫০০ টাকায় তাকে চলতে হতো। এর মধ্যে কলেজের হলের খাবার বিল দিতে হয়েছে মাসে এক হাজার ২০০ টাকা। প্রাইভেট পড়া হয়নি তেমন। নিজেকেই বান্ধবীদের বই ধার করে পড়তে হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরো জানান, কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. শাহিন শাহ্ স্মৃতি বালার আর্থিক অনটনের কথা জেনে ফ্রিতে তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে হলের সিটভাড়া মওকুফ করে দেয়। আর এভাবেই অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এ মেধাবী শিক্ষার্থী এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার পরও অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দুচোখে দেখছেন শুধুই অন্ধকার।
যদিও স্মৃতি বালার স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে একজন চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু দরিদ্রতা তাকে টেনে ধরছে। এরই মধ্যে স্মৃতির মা শেফালী রানী সরকার শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি এখন অসুস্থতার কারণে তার ক্ষুদ্র দর্জির দোকানে তেমন কাজও করতে পারেন না। যে কারণে আয় কমে গেছে। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খেই হারানো পরিবারটির প্রধান মা শেফালী রানী সরকার ভরণ-পোষণ থেকে স্মৃতিও তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ভাই শ্রাবণকে পড়া-লেখার খরচ জোগাতে পারছেন না কোনোভাবেই। তাই এত ভালো ফলাফলের পরেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে স্মৃতিকে চিকিৎসক বানানোর মা-মেয়ের স্বপ্ন যেন অধরাই থেকে যেতে বসেছে।
স্মৃতির মা শেফালী রানী সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, দর্জির দোকান থেকে পাওয়া আয় ও দু-একটি গরু পালন করে কোনোমতে এত দিন সংসার চললেও, স্মৃতির পড়া-লেখার জন্য সামান্য খরচ জোগাতে এরই মধ্যে একটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। আর অসুস্থ থাকায় দর্জির কাজও ঠিকমতো করতে পারছেন না। তাই স্মৃতিকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আর্থিক কোনো সংগতিই আমার নেই। সমাজের কোনো সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতেন, তিনি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকতেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা জানান, মেধাবী স্মৃতি বালার ভর্তির সময় উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।