৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় সকাল ১০:৩৫ মিনিট
  1. অপরাধ
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আড়াইহাজার
  4. আদালতপাড়া
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আর্কাইভ
  7. ঈদ আড্ডা
  8. ঈদ আনন্দ
  9. কক্সবাজার
  10. কুমিল্লা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুলনা
  14. খেলাধুলা
  15. চট্রগ্রাম
 

বগুড়ার শেরপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি হাটের জায়গায় একাধিক মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ

প্রতিবেদক
joysagortv
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৭:১৭ অপরাহ্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি:

এ যেন বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার দশা। খাজনা আদায়ের পাশাপাশি যে ইজারাদারের দায়িত্ব ছিল সরকারি হাটের জায়গার অবৈধ দখলমুক্ত রাখা, সেই ইজারাদারই প্রায় অর্ধশত পাকা দোকান ঘর তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট। ইজারাদার নিজেও নিয়েছেন একাধিক দোকান। বরাদ্দ দিয়েছেন, ভাই, ভাতিজা, শশুর, শ্যালক ও ভায়রাসহ নিকটাত্মীয়দের নামে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর হাটের সরকারি জায়গার প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে সম্প্রতি মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও হাটের ইজারাদার এর বিরুদ্ধে। জানা যায়, স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে স্থানীয় পাঁচ—সাত জনের একটি গ্রুপ হাটের ইজারা নেয়। দীর্ঘ ৫ বছর হলো এই গ্রুপটি হাটের ইজারার নিয়ন্ত্রন ধরে রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন যাবত হাটটি তাদের দখলে রেখেছে।
হাটের বেশিরভাগ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট নিমার্ণ করায় স্থানীয়দের মাঝে অনেকটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, এমনিতেই ক্রেতা ও বিক্রেতার তুলনায় হাটের ফাঁকা জায়গা খুবই কম। তার ওপর হাটের মাঝখানে এভাবে অবৈধ মাকেট নির্মাণ করে হাটের জায়গা সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়েছে।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাটে ধানের বাজার বসেছে সীমাবাড়ি—রাণীরহাট সড়কের উপরে। এতে করে যানবাহন চলাচলে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। দুধের বাজার বসেছে ইউনিয়ন পরিষদের সড়কের মাথায়। হাঁস—মুরগীর হাট বসেছে ব্যাক্তি মালিকানাধীন এক জায়গায়। সব্জী ব্যবসায়ীদের অনেকে হাটে জায়গা না পেয়ে বাজারের শেরপুর—ভবানীপুর সড়কের উপরেই তাদের অস্থায়ী দোকান সাজিয়েছেন।
হাটের ইজারাদারদের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রউফ। যার নামেই মূলত হাটের ইজারার রশিদ ইস্যু করা হয়েছে। যিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একজন নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ—এর চাচাতো ভাই। চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘ ২ যুগ ধরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির পদে রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ইজারাদার আব্দুর রউফ কিংবা অন্য যারাই এখানে মার্কেট নির্মাণ করে থাকুক না কেন, চেয়ারম্যানের সম্মতি ছাড়া এখানে ‘গাছের একটা পাতাও নড়েনা।’
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, হাটের জায়গায় মার্কেট তুলে এসব দোকান আয়তন ভেদে প্রতিটি এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়েছে। এসব টাকার সিংহভাগই মূলত ইজারাদার আব্দুর রউফ—এর হাত ঘুরে চলে যায় চেয়ারম্যানের পকেটে। তবে চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মার্কেট নির্মাণে তার সংশ্লিষ্টতা ও অর্থের বিনিময়ে দোকান বরাদ্দের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে ভবানীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার হাটের অবৈধ দখলের বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ড বরাবরে মুঠোফোনে সচিত্র প্রতিবেদন পাঠান। এরপর এসিল্যান্ড নিজেও সশরীরে অবৈধ এসব মার্কেট নির্মাণের ঘটনা পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু এরপর রহস্যজনক কারণে থেমে গেছে প্রশাসনের সব তোড়জোড়। দিনে—দুপুরেই চলছে মার্কেটের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার পালা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইজারাদারদের একজন জানান, “চেয়ারম্যানের অনুমতি ও দিক নির্দেশনা মতোই মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে রাখ—ঢাকের কী আছে? বর্তমান এমপি চেয়ারম্যানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, প্রশাসনিকভাবে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তিনি এমপি সাহেবের মাধ্যমে সব ম্যানেজ করে দিবেন।”

হাটের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার আব্দুর রউফ দুই ধরনের বক্তব্য দেন। প্রথমে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব মার্কেট নির্মাণ করেছেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি আবার বলেন, হাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন পাকা দোকানঘর নির্মাণের জন্য। এতে তার নিজের কোনো সংশ্লিষ্ট নেই বরং যা হয়েছে চেয়ারম্যানের নির্দেশ মতোই হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, দোকান ঘরগুলো উপজেলা পরিষদের হাটবাজার উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে করা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তিনি দাবী করেন।
অপরদিকে, উপজেলা পরিষদে যোগাযোগ করলে, দোকান ঘর নির্মাণের বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামসুন্নাহার শিউলি জানান এটি আমার জানামতে কোন প্রকল্পের ভেতরে নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার জুলহাস জানান ভবানীপুর হাটে দুটি প্রকল্প রয়েছে একটি এলজিইডি’র ভবন নির্মাণ আরেকটি ওপেন সেড। টিনশেডের নতুন দোকান ঘর নির্মাণের বিষয়টি সরকারি কোনো প্রকল্পের অন্তভুর্ক্ত নয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলেন, দোকান ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ চলছে বলে আমার জানা নেই। খেঁাজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, হাটের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। আমি খেঁাজ নিয়ে দেখছি। তবে ভবানীপুর হাট আমি অপদখলমুক্ত করতে চাই। অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নেব। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন বিষয় আমার জানা নেই, আমি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

১৮—০৪—২০২৪ইং

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ - বিনোদন