দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের মাঝেই ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে ক্রেমলিন। মঙ্গলবার মস্কো বলেছে, ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েনরত কিছু সৈন্যকে সামরিক ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান এবং যুদ্ধ এড়াতে ক্রেমলিন-কিয়েভের ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিতের মাঝে সৈন্য ফেরানোর কাজ শুরু করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাশিয়ার সরকারি একাধিক বার্তাসংস্থা বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘দায়িত্বপালন শেষে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভিন্ন সামরিক জেলার অধীনস্ত ইউনিটগুলো ইতোমধ্যে রেল ও সড়ক পরিবহনগুলোতে আসন গ্রহণ করতে শুরু করছে এবং আজই তারা সামরিক ঘাঁটিতে ফিরে যাবে।’
অবশ্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত সংকট নিরসনে বা চলমান উত্তেজনা কমাতে ঠিক কতটা ভূমিকা রাখবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা করতে পারে বলে আগেই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ওয়াশিংটনের পশ্চিমা মিত্ররাও।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে ওয়াশিংটনের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও। এমনকি আগামীকাল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এই হামলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যদিও নির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
এদিকে, রাশিয়ার আগ্রসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা আগেই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো দেশগুলো। ফ্রান্সও এই ইস্যুতে ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে রাশিয়া ও চীন।
এর আগে আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সংকটের সমাধান করতে রাশিয়া সফর করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সফরে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। কিন্তু সংকট ও উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ইউক্রেন সফরে যান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং ইউরোপে সম্ভাব্য একটি যুদ্ধ এড়াতেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে যান তিনি।
এছাড়া ইউক্রেন সফর শেষ করে মঙ্গলবার রাশিয়া গেছেন ওলাফ শলৎস। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথাও রয়েছে জার্মান চ্যান্সেলরের। এবার তার সফরের মধ্যেই ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানালো মস্কো।