কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ পরবর্তী চিংগরিয়া খালের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় শীর্ষক পরামর্শমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজনে বুধবার বেলা ১১টায় কলাপাড়া পৌরসভার হল রুমে এ পরামর্শমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। চিংগরিয়া খালের বিভিন্ন দিক নিয়ে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন। কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর কলাপাড়া নেটওয়ার্ক মেম্বার মেজবাহউদ্দিন মাননু এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কলাপাড়া পৌরসভার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ও সমাজকর্মী মনোয়ারা বেগম, নাগরিক উদ্যোগ কলাপাড়া এর আহবায়ক নাসির তালুকদার, কলাপাড়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোশারফ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নেছার উদ্দিন আহমেদ টিপু, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর কলাপাড়া নেটওয়ার্ক মেম্বার ও সংবাদকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান সুজন মৃধা, কলাপাড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি এইচআর মুক্তা, সাবেক সভাপতি এস কে রঞ্জন, সদস্য মো. ওমর ফারুক, পরিবেশ কর্মী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব, ব্যবসায়ী ও সংবাদকর্মী রেহান উদ্দিন রেহান, লেখক গাজী মোহাম্মদ রিয়াজ প্রমুখ। এ সময় বক্তারা, চিংগরিয়া খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলদারদের তালিকা, খাল খনন, পরিষ্কার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, শুধু সভা সেমিনার করে হবে না। যারা খালকে নাল দেখিয়ে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়াসহ দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর খাল দখলে সাহস না পায়।
উল্লেখ্য, কলাপাড়া পৌরসভার ভিতর দিয়ে একটি খাল প্রবাহিত হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে “চিংগরিয়া খাল” নামে পরিচিত। খালটি কলাপাড়ার খেপুপাড়া মৌজায় আন্ধারমানিক নদী হতে উৎপন্ন হয়ে কলাপাড়া পৌরসভার ১ থেকে ৭ নং ওয়ার্ডের অংশবিশেষের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম শেষে একই মৌজার চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়া নদীর (দোন) সাথে মিশেছে। কলাপাড়া ভূমি অফিসের তথ্যানুযায়ী খালটির মূল স্রোতধারা খেপুপাড়া মৌজার ৪৪৩, ৫২৬ ও ৮৪২ নং দাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত। খালটি কলাপাড়া পৌরসভার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র খাল। ৫০০০ পৌরসভাবাসীর কাছে এ খালের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিকাজ, পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার্য পানির একমাত্র উৎস এ খালটি। কলাপাড়া পৌরসভাটি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষাকালে ও জলোচ্ছাসের সময় সমুদ্রের লোনা পানিতে এখানকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ডুবে যায়। লবণাক্ত এ পানি এ খাল দিয়েই দ্রুত নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিস খাল হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি নাল হিসেবে পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক উল্লেখিত খালের অংশবিশেষ ব্যক্তিবিশেষের নিকট দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করে। বন্দোবস্ত গ্রহীতাগণ খালের অংশে বার্ধ দিয়ে মাছ চাষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় খাল ভরাট করে নির্মাণ করেছে বিভিন্ন স্থাপনা। ফলশ্রুতিতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাল সংকীর্ণ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী। জলাবদ্ধতায় ফসল ফলাতে পারছে না শত শত একর জমির মালিকগণ। খালের ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও শ্রেনী পরিবর্তন এবং বেআইনিভাবে প্রদানকৃত বন্দোবস্ত বাতিলসহ খালটি যথাযথ সংরক্ষণে বেলা একটি মামলা দায়ের করে।