মোঃ হামিদুজ্জামান জলিল
স্টাফ রিপোর্টার
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতার অর্থ অনিয়মের মাধ্যমে উত্তোলন করে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান ও শিক্ষক নেতা মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত অর্থবছরে উপজেলার ১৫০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী পাওয়ার যোগ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার অর্থ বরাদ্দ ছিল মোট ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২২ জন শিক্ষকের নামে অনলাইনে কাব বিল বাবদ ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৫০ টাকা এবং অফলাইনে ৩৭ জন প্রধান শিক্ষকের নামে ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকার ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহমুদ হাসান ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের মনোনীত ১৫০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানদের (এদের মধ্যে অধিকাংশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) নামে অফলাইনে অতি গোপনে ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুত করে ওইসব শিক্ষকগণের নিজ নিজ হিসাব নাম্বারে পাঠানো হয়। ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ শিক্ষা অফিসার মাহমুদ হাসান তার নিজ কক্ষে মিজানুর রহমানের সহায়তায় করে থাকেন বলে জানা যায়। প্রতিজন প্রধান শিক্ষকের হিসাব নাম্বারের ৫ হাজার ২৫০ টাকা করে ৩৭ জনের মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা ঢোকে। পরবর্তীতে ঐসব শিক্ষকগণ স্ব স্ব হিসাব নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করে তা মিজানুর রহমান ও তার মনোনীত মালিয়াট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান ফিরোজ ও হুদা ডাউটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুর আলীর নিকট জমা দেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষকের মাসিক সমন্বয় সভার জন্য ভ্রমণ ভাতা প্রদান করা হয়। মূলত প্রধান শিক্ষকগণের আসা-যাওয়ার খরচ হিসেবে তারা ভ্রমণ ভাতা পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকগণের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের থেকে সভার স্থলে আসা জন্য কমপক্ষে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব এবং তাদের বেসিক বেতনের সাথে সমন্বয়পূর্বক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুত করে অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারি এ নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে টিইও মাহমুদ হাসান ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ৩৭ জন প্রধান শিক্ষকের নামে ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন করে তাদেরকে মাত্র ৯৫০ টাকা হারে ৩৫ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করে বাকি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকার অফিসিয়াল কোনো হিসেব কেউ দেখাতে পারেন নি। সাধারণ শিক্ষকদের ধারণা মাহমুদ হাসান ও মিজানুর রহমানের যোগসাজসে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ খবর শিক্ষক মহলে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের নামে ৫ হাজার ২৫০ টাকার বিল করে আমাদেরকে মাত্র ৯৫০ টাকা দিয়েছেন মিজানুর রহমান। বাকি টাকা তিনি রেখে দিয়েছেন। আর এসব ব্যাপারে সবকিছুই টিইও মাহমুদ হাসান স্যার জানেন। অনিয়মের মাধ্যমে ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পূর্ব থেকে এভাবেই ভ্রমণ বিল করা হয়। শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার অর্থ তাদের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। যা কিছু হয়েছে মাহমুদ স্যার এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেই করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসানের সাথে প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুতের কপি, শিক্ষকগণের টাকা প্রাপ্তির রেজুলেশন বা রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ তালিকা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে উঠা অনিয়মের মাধ্যমে ভ্রমণ ভাতার বিল উত্তোলন ও তা আত্মসাতের অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার বিল উত্তোলনের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ব্যাপারটি আমি টিইওকে ডেকে বিস্তারিত জানাব। অনিয়ম কিছু থাকলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।