১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় রাত ১:০৭ মিনিট
  1. অপরাধ
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আড়াইহাজার
  4. আদালতপাড়া
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আর্কাইভ
  7. ঈদ আড্ডা
  8. ঈদ আনন্দ
  9. কক্সবাজার
  10. কুমিল্লা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুলনা
  14. খেলাধুলা
  15. চট্রগ্রাম
 

ঘুষের টাকা হজম করতে বিধি লংঘন করে নিয়োগ বাণিজ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক

প্রতিবেদক
joysagortv
আগস্ট ১৯, ২০২৪ ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

এম.এ.এইচ আকাশ:
বিদায়ী সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। দেশে কোন সরকার না থাকায় সেই সুযোগে গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে লিখিত ও মৌখিত পরিক্ষার কার্ড ইস্যু করা হয়, যা ২৪ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হবে বলে উক্ত কার্ডে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সরকার না থাকা অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ কিভাবে, কার অনুমোতি নিয়ে স্কুলে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নস্থ সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। বর্তমানে দুর্নীতি-বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঠিক সেই মুহুর্তে সকলের অগোচরে উক্ত বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক চাকুরি দেওয়ার নাম করে আগে থেকে ৮০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তা হজম করতে বিধি লংঘন করে নিয়োগ বাণিজ্য করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা নিয়ে বর্তমানে এলাকার জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ নতুন সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কাছে হস্তক্ষেপ কামনা ও তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির মতামত না নিয়ে জনবল নিয়োগের নামে বিধি লংঘনসহ অসংগতিপূর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রদানের পূর্বেই বে-আইনী ভাবে বিপুল পরিমাণ ঘুষের লোভে আবারও নিয়োগ বাণিজ্যের কার্যক্রম শুরু করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুলতান ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক গত ৮ সেপ্টেম্বর-২০২৩ ‘দৈনিক যুগেরকথা’ ও ৪ অক্টোবর-২০২৩ ‘দৈনিক মানবজমিন’ পত্রিকায় ৫টি পদে নিয়োগের জন্য বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় জনবল কাঠামো ও এম.পি.ও নীতিমালা-২০২১ নিয়োগ বিধি লংঘনসহ ভুল-ত্রুটি সম্বলিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের ব্যাংক ড্রাফ্ট অগ্রণী ব্যাংক এনায়েতপুর শাখার হিসাব নং-৫৩৩০-এর অনুকুলে জমা দেয়ার কথা প্রকাশ করলেও তা না করে অবৈধ উপায়ে অগ্রণী ব্যাংক বেলকুচি শাখার ০২০০০০৮৩৮১১৯৮-এর অনুকলে জমায় আবেদনপত্র গ্রহণ করে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো: শাহাদৎ হোসেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নানা ভুল-ত্রুটিসহ বিধি লংঘন করে উক্ত নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা না করতে তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গায়ের জোড়ে তাদের পছন্দের সক্রিয় জামায়াত-বিএনপির পরিবারের সদস্যদের নিকট হইতে বিপুল পরিমাণ ঘুষ গ্রহণ করে গত ৪ জানুয়ারী ২০২৪ইং তারিখে নিয়োগ পরিক্ষার জন্য প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কার্ড বিতরণ করেন।
বিধি লংঘন করে অবৈধ ভাবে পাতানো নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধের দাবীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা, চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাদপুর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ শাহাদৎ হোসেন সরকার। তিনি গত ২ জানুয়ারী ২০২৪ইং তারিখে অভিযোগ করলে গত ৪ জানুয়ারী ২০২৪ইং তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে উক্ত নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করা হয়।
এদিকে, বেলকুচি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শাহজাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলাদা দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেননি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল বা তদন্ত কার্যক্রম শেষ না করেই পুনরায় স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ঘুষ বাণিজ্যের লোভে বিধিবহির্ভূত ভাবে আবারও নিয়োগের পায়তারা করছেন।স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজস করে আবারও গত ৩ মার্চ ২০২৪ইং তারিখে ‘দৈনিক যুগের কথা’ পত্রিকায় সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
অপরদিকে, নিয়োগ পরিক্ষা বিলম্বিত হওয়ায় যেসব পদের বিপরীতে প্রার্থীদের নিকট ঘেকে ঘুষ নিয়েছে তারা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নিকট টাকা ফেরৎ চাওয়ায় সভাপতি তাদের সাখে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘুষের ঘটনা এলাকায়
জানাজানি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে বিগত সরকারের পতন হওয়ার সুযোগ নিয়ে দেশে কোন সরকার না থাকা অবস্থায় গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে আবারও নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে প্রার্থীদের নিকট লিখিত ও মৌখিত পরিক্ষার কার্ড ইস্যু করে, যা ২৪ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকা অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ কি ভাবে, কার অনুমোতি নিয়ে স্কুলে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চলছে নানা গুঞ্জন।অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ পরিক্ষার পূর্বেই বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ৫টি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ এমরান হোসেনের নিকট থেকে ২০ লক্ষ টাকা, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মোঃ রাশেদুল ইসলামের নিকট খেকে ১৬ লক্ষ টাকা ঘুষ নেন। উল্লেখ্য পূর্বের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নীতিমালা ভঙ্গ করে এই পদে উল্লেখ ছিল এসএসসি পাস, কিন্তু জনবল কাঠামোতে সর্বনি¤œ যোগ্যতা বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস হতে হবে। সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির যাচাই বাছাইয়ে মো: রাশিদুল ইসলামের আবেদন বাতিল করলেও এখন পর্যন্ত তার ঘুষের টাকা ফেরৎ দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিস সহকারী পদে মোঃ সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা এবং আয়া পদে মোছাঃ সালমার নিকট থেকে টাকা নিলেও পরবর্তীতে অন্য এক প্রার্থীর নিকট থেকে তারা ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছে। ঘুষ বাণিজ্য করে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে আবারও গত ০৮-০৮-২০২৪ তারিখ ইন্টারভিউ-এর কার্ড বিতরণ করে।


এর আগে তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকাবস্থায় বিধিবহির্ভূত ভাবে আবারও পাতানো নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধের দাবীতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ শাহাদৎ হোসেন সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা, চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাদপুর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধসহ বিধিবহির্ভূতভাবে যেন নিয়োগ দিতে না পারে তার সু-ব্যবস্থা ও সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উল্লেখিত সরকারি কর্মকর্তাদের আবেদন জানান ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ শাহাদৎ হোসেন।খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদের আর মাত্র দেড় মাস চাকুরি আছে, এর পরে অবসরে যাবেন। আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুলতান আর কখনো স্কুলের সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ নতুন নীতিমালা অনুযায়ী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তাই তারা চাকুরি দেয়ার নাম করে যেসব প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ হিসাবে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছে তা হজম করার জন্য দ্রুত নিয়োগ বাণিজ্য কার্যক্রম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান-এর ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন দপ্তরে মামলা ও অভিযোগ চলমান রয়েছে। জালালপুর ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের ইট, টিন, কাঠ, রড বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকারের ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় সরকার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা করে। অর্থ আত্মসাৎ-এর দায়ে দুই মাস কারা ভোগ করেন তিনি। দায় স্বীকার করে ৩০ লক্ষ টাকা সরকারের কোষাগারে ফিরত দিলেও কোর্টে তার মামলা চলমান রয়েছে।অপরদিকে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ-এর ব্যাপারে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্কুলের তহবিল থেকে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা চেক ও কার্ড দিয়ে উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানে খরচ না করে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। ইতোপূর্বে তাকে অপসারনের জন্য মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ - বিজ্ঞান প্রযুক্তি

আপনার জন্য নির্বাচিত