তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে রোপা আমন ধানের চারা। এলাকায় চারা ধানের চাহিদা থাকায় যে কোন স্থান থেকে আমন ধানের চারা সংগ্রহ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এ বছর রোপা আমনের চারার দামটাও বিগত বছরের চেছে একটু হলেও তা পাওয়া যাচ্ছে সহজেই এমনটাই বললেন ওয়াশীন গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান মিয়া।
চলতি বছর বন্যা কম হওয়া ও আবাদ মৌসুমে প্রয়োজনের তুলুনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিল এলাকায় রোপা আমন আবাদে কৃষক খানিকটা ছন্দ পতন ঘটেছে। তার পরও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত মাঝারি বর্ষণে রোপা আমন আবাদে নতুন মাত্রা পায় বিল এলাকায়। এতে শত শত কৃষক রোপা আমন ধানের জমি তৈরি করে ধান লাগাতে শুরু করেন। ইতি মধ্যেই প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান লাগানোর কাজ শেষে হয়েছে। আর এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমি গুলোতে চারা ধান লাগানোর কাজ শেষে হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা।
বর্তমানে রোপা আমন চাষে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর প্রায় একযোগে এলাকায় রোপা আমন আবাদ শুরু হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে রোপা আমন ধানের চারা বীজের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি স্বাভাবিক বন্যা না হওযায় বিলের অনেক নিচু জমিতেও কৃষক এ বছর রোপা আমন আবাদে উদ্যোগি হওয়ায় চলনবিরাঞ্চলে এ বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১২টি হাটে রোপা আমনের চারা বিক্রি ইতো মধ্যেই পুরোদমে চলছে। এসব হাট-বাজারে, স্থানীয় জাতের আব্দুল গুটি, কাটারিভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি৫৮, ব্রি-৩৪ ও ব্রি৩৬ জাতের রোপা আমনের চারা বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে চারা ব্যাপক চাহিদা থাকায় হাট বারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়েও চারা বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। কৃষকেরা হাতের নাগালে চারা কিনে তা দ্রুতই জমিতে লাগাতে পারছেন। এতে কৃষকের সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তালম, বারুহাঁস, নওগাঁ, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর, দেশিগ্রাম ও তাড়াশ পৌর এলাকায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত ২০২৩ সালের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টর বেশি। এ কারণে আবাদের মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন করতে গিয়ে এলাকার কৃষকদের মাঝে চারা বীজের চাহিদাও বেড়েছে। আর চারা বীজের চাহিদার প্রেক্ষিতে চলনবিলাঞ্চলে চারা বীজ বিক্রি হয় এমন হাট-বাজারের পাশাপাশি যে সকল কৃষকের জমিতে উদ্ধৃত্ত চারা বীজ রয়েছে সেখান থেকে কৃষককেরা তা সংগ্রহ করতে চলে যাচ্ছেন।
তাড়াশ পৌর শহরের কৃষক মো. মুক্তার হোসেন মুক্তা বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে এক পণ থেকে সোয়া পণ (৮০ আঁটিতে এক পণ) চারা বীজ প্রয়োজন হয়। তার বাজার মূল্য বর্তমানে চারা ধানের প্রকার ভেদে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা। আবাদের শুরুতে এক পণ থেকে সোয়া পণ চারা বীজ কিনতে বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি টাকা লাগলেও এখন চারার চাহিদা দনি দিন কমে আসছে। তবে কৃষকদের নাগালের মধ্যেই আছে এতেই খুশি।
তিনি আরো জানান, ভাদ্রের শেষে চলনবিল অঞ্চলের অনেক এলাকার নিচু জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় অনেক কৃষক জমি পতিত (জমি ফাঁকা না রাখা) বা ফেলে না রেখে দেরিতে হলেও জমিতে রোপা আমনের চারা বীজ লাগাচ্ছেন। এতে শেষ সময়েও চারার চাহিদা একটু বেশিই বেড়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একটু দেরিতে হলেও চলনবিল অঞ্চলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হচ্ছে। আর তেল, বিদ্যুৎ সরবারাহ স্বাবাবিক থাকা পর্যাপ্ত রাসানিক সারের সহজ লভ্যতার কারণে কৃষক এ আবাদে অধিক মনোযোগ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চলনবিল এলাকা থেকে চলতি বছরে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: হাসান ইমাম তালুকদার
মোবাইল: 01711412874, 01712197481
ঢাকা অফিস: ৫০/১,পল্টন লাইন, পুরানা পল্টন,পল্টন, ঢাকা।
সিরাজগঞ্জ অফিস: হাউস নম্বর ৪০, মায়া কুঞ্জ, মোক্তার পাড়া, সিরাজগঞ্জ।
Design & Development By HosterCube Ltd.