মোঃ হামিদুজ্জামান জলিল, স্টাফ রিপোর্টার:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শিক্ষক সমিতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে অবৈধ নোট গাইড ও প্রশ্ন বাণিজ্য করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।একই ধারাবাহিকতায় বিগত দিনের ন্যায় চলতি বছরেও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশ্ন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সমিতিভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রশ্ন বিক্রি করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে দশম শ্রেণী নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় অর্থনীতি, ব্যবসায় উদ্যোগ,কৃষিশিক্ষা ও খ্রিষ্টান ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয় ব্যতীত সকল বিষয়ের প্রশ্ন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরবরাহ করছে। বাকি বিষয়ের প্রশ্নগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দ্বারা প্রণয়ন করে সেই প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে সরকারিভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয় প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে । কিন্তু কালীগঞ্জ শিক্ষক সমিতি বরাবরের মতো প্রশ্ন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সরকারি নির্দেশ না মেনে বাইরে থেকে কেনা প্রশ্ন এনে বিভিন্ন স্কুলে বিক্রির অভিযোগ করছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।এসব নিম্নমানের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও শিক্ষকরা উল্লেখ করেন। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক সমাজও চরম উদ্বিগ্ন। অপরদিকে, পনি/প্রশ্নব্যাংক ০১/৬৫২ স্মারকে ০৭ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর নির্বাচনী পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করে। উক্ত সময়সূচীতে উপজেলা শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ নিজেদের স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্রের চাহিদার জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে ২০ অক্টোবর সকালে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাট বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বছর ১১৫ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এসব পরীক্ষার্থীদের চারটি বিষয়ের প্রশ্ন শিক্ষক সমিতি থেকে বিক্রি করা হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১১০০ টাকা। বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে সমিতির নিকট বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নের চাহিদাও প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে ঘোষনগর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল জানান, আমার প্রতিষ্ঠানে এ বছর ২৬ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। যে বিষয়সমূহ বোর্ড থেকে প্রশ্ন দেয়নি সেই বিষয়ের প্রশ্নগুলো আমি সমিতি থেকে কিনেছি। বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নের চাহিদাও সমিতিতে দেওয়া আছে। সময় মত ঐসব প্রশ্নও পেয়ে যাব। কালীগঞ্জ শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল হোসেনের নিকট শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন বাণিজ্যের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে প্রশ্ন তৈরি করে তা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়েছে। কোন কেনা প্রশ্ন এবার দেওয়া হয়নি। সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন বাণিজ্য করার কারণে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল আলীম জানান, বিদ্যালয় সমূহ কিভাবে নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েছেন এবং বোর্ড কর্তৃক নির্বাচনী এবং বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ব্যাপারে কি নির্দেশনা আছে সেটা ভালোভাবে দেখে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে । তাছাড়া যেসব শিক্ষকরা এসব প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কিংবা বিক্রি নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে ডেকে তাদের সাথে কথা বলবো। সমিতির মাধ্যমে প্রশ্ন বিক্রি সরকারের আইন লঙ্ঘন হয় কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা পরিষদের প্রধান দেদারুল ইসলাম এর নিকট সরকারি বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষক সমিতির প্রশ্ন বাণিজ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাপারটি আমার জানার বাইরে। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে অবগত করছি। এ ব্যাপারে সরকারি বিধি লঙ্ঘিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।