মোঃ হামজা শেখ, রাজবাড়ী :
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের জেলার অন্যতম সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ শেখের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ঘুরপাক খাচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। সম্প্রতি এই মর্মে অধিকাংশ শিক্ষক মিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৭-০৮-২৪ তারিখের সূত্র ৩৭,০০,০০০০,০৬১,০১৮,১৬ -২০১৬ – ১৯৩, ০৩-০৯-২৪ স্মারক নং ৩৭,০০,০০০০,০৬১,০১৮,১৬ -২০১৬ – ১৯৯,
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালের জুলাই মাস ১ তারিখ হতে আজ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক কোন প্রকার বীধিবিধান, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নীতিতে স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। বিদ্যালয়ের গাছ, পুরাতন জিনিসপত্র, বিক্রয়, স্কুলের পুকুর, জমিজমা লিজ, বিদ্যালয়ের ৮০টি দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া। নিয়ম অনুসারে এক্ষেত্রে কোন উপকমিটি আহ্বান করা হয়নি। ৫৪ টি ঘরের ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে জামানত হিসেবে ৬৫ লাখ টাকা নিয়েছেন, যা ব্যাংকে জমা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ছবি তোলা, রেজিষ্ট্রেশন, ইউনিক আইডি কার্ড তৈরী করার কথা বলে পছন্দের শিক্ষক দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়,তাদেরকে দেয়া হয়নি ইউনিক আইডি। ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর ক্ষেত্রে চতুর্থ শাখা খোলার অনুমতি না থাকলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি বিহীন শুধুমাত্র অর্থ আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে চতুর্থ শাখায় ছাত্র ভর্তি করিয়েছেন। বিদ্যালয়ের আয়, ব্যয় এর ক্ষেত্রে তার দূর্ণীতি অপরিসীম। যা সঠিক তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। তিনি দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের কোনো অডিট করান না।
বিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা, ২টি ঈদের বোনাস, দূর্গাপূজার বোনাস, বৈশাখীর উৎসব বোনাস বিদ্যালয় ফান্ড থেকে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের বার্ষিক আয় ৮০ লক্ষ টাকা হলেও শিক্ষক কর্মচারীদের বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ৩০ লক্ষ টাকা ভাতার টাকা বকেয়া রয়েছে। অর্থ ও ক্রয়, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্কাউট, অডিট, শিক্ষার মান উন্নয়নসহ পরিচালনা পর্ষদ গঠনে তার নগ্নভাব প্রকাশ পায় । কমিটি গঠনে তার পছন্দের মতো না হলে তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে দেন না কমিটিকে। শিক্ষকদের ক্লাস বন্টনে অনিয়ম করেন প্রতিনিয়ত। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণ বিহীন ল্যাব অপারেটার, ল্যাব সহকারী, অফিস সহকারী দিয়ে ক্লাস নেন। তিনি নিজে কোন ক্লাস নেননা। নৈশ প্রহরীকে দিয়ে দিনের বেলায় ক্রয় কমিটি থাকলেও তাকে দিয়ে কেনাকাটা করানোসহ দোকান ঘরের ভাড়া উত্তোলন করান। অতি ভালোবাসার খাতিরে নৈশ প্রহরীকে ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ভিআইপি খাটে। তার সহযোগিতায় করোনাকালীন সময়ে সরকার থেকে দেওয়া ৪টি ল্যাপটপ চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। নিয়মিত অফিস সহকারী থাকলেও খন্ডকালীন অফিস সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। এর পরও ৮ জন খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে বেতন উত্তোলন করেন। প্রতি দিনের আয় ব্যয় ক্যাশ খাতায় লেখার প্রয়োজন মনে করেন না প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষারমান উন্নয়ন, শিক্ষকদের ছুটি, প্রশিক্ষণ, অর্থ প্রদানে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনা প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ শেখ। প্রধান শিক্ষকের এহনো কর্মকান্ডে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের জন্ম নেয়। ফলশ্রুতিতে বেরিয়ে আসে প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতি খবর। বিক্ষুব্ধ শিক্ষক কর্মচারীগণ এসব দুর্নীতির বিষয় নিয়ে আবেদনের কপি প্রেরন করেন,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, শিক্ষা উপদেষ্টা,শিক্ষা উপদেষ্টা একান্ত সচিব, সিনিয়র সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ), মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মহাপরিচালক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, বিদ্যালয় পরিদর্শক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, দূর্ণীতি দমন কমিশন রাজবাড়ী, জেলা শিক্ষা অফিসার রাজবাড়ী, অপজেলা শিক্ষা অফিসার বালিয়াকান্দি, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানা ও অফিসে।
এলাকা বাসী জানায় কয়েক মাস হয়েছে স্কুলের নাম ফলক সম্বলিত লোহার গেট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বোঝার উপায় নেই কোনটি বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে পাশে স্কুল থেকে ঘড় ভারা নিয়ে করে উঠেছে নোংরা পরিবেশের সিঙ্গারা দোকান। স্কুল টাইম শুরু হলে প্রবেশ পথের পাশে গরম তেলে সিঙ্গারা ভাজা শুরু করেন। যে কোন সময় গরম তেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলাকাবাসী আরও জানায় স্কুলে গেট না থাকায় সন্ধ্যার পর মাদক সেবিরা প্রবেশ করে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক সেবন করে। এ যেন মাদকের আখড়া। ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।