নিয়ামুল ইসলাম, ধুনট (বগুড়া):
বগুড়ার ধুনট উপজেলা জুড়ে উন্নয়ন ও সংস্কারে বরাদ্দ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে দপ্তরসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে। যা উন্নয়নের ধারাকে বিঘ্ন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। সাধারন মানুষের নানা প্রতিক্রিয়ায় কারনে বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নজরে আসে। পরবর্তিতে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য অনুসন্ধান করতে থাকে সংবাদ কর্মীরা।
সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা হতে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পাসের উন্নয়নের অনুকূলে ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। তার বিপরীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস ভবন মেরামত, পরিষদের অভ্যন্তরীণ ২০০ মিটার সড়ক নির্মান, উপজেলা ক্যাম্পাসের ভিতরে বসার জায়গা ও শেড সহ ঘাটলা নির্মান, উপজেলা ইছামতি ভবন সংলগ্ন বিভিন্ন কার্যালয় মেরামত, মোটরসাইকেল শেড নির্মান, সমাজ সেবা ও মহিলা বিষয়ক অফিসারের দপ্তরে আগত মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট নির্মান, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় মেরামত, উপজেলা পরিষদের জরাজীর্ণ ও বসবাস অনুপযুক্ত করতোয়া ভবন মেরামত, উপজেলা দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের গেট নির্মান ও শহীদ মিনার চত্ত্বরে গেট নির্মান, অফিসার্স ক্লাব,পরিষদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে রান্নার জন্য রান্নাঘর নির্মান সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী জানান, উপজেলা পরিষদের নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের জন্য পুরাতন কমপ্লেক্স ভবন টি নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। উক্ত ভবনে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, উপজেলা সমাজ সেবা, মহিলা বিষয়ক, সমবায়,পরিসংখ্যান, হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের অফিস ছিলো।পরবর্তীতে উক্ত অফিস সমূহ পরিষদের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে দুটি জরাজীর্ণ ও বসবাস অনুপযুক্ত ভবনে অফিস জরুরি স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভবন সমূহ সেবা উপযোগী করার তাগিদে বিশেষ ভাবে বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হয়।
পরবর্তীতে বরাদ্দ সাপেক্ষ এবং মাসিক সমন্বয় সভার সিন্ধান্তক্রমে উক্ত কাজ সমূহে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ অনুসরণ করে উক্ত কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, উক্ত কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন হবার কারনে পরিষদের অফিস সমূহ সঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম চলমান রাখতে পারছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রাস্তা হবার কারনে এতদিন পরিষদের ভিতরে যে ধুলাবালি উড়তো, একটু বৃষ্টিতে কাদা হতো সেটা বন্ধ হয়ে গেছে এবং দৃষ্টিনন্দন রাস্তা, ঘাটলার কারনে পরিষদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী জানান, কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে শুকনো পুকুরে ঘাটলার কি প্রয়োজন ছিলো? তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরিষদের অভ্যন্তরীণ এই পুকুর টি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উক্ত পুকুরটিতে পানি না থাকায়, জঞ্জাল জন্মে মশার উপদ্রব হয় এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটু অবস্থায় পুকুরটির অবস্থান ছিলো। উক্ত পুকুরে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃষ্টি, মাছ চাষ, দৃষ্টিনন্দন শেড সহ বসার জায়গা নির্মানের সিদ্ধান্ত হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রথমত ঘাটলার কাজ টি শুরু হয়। ঘাটলা করার জন্য পুকুর শুকনো না থাকলে স্ট্রাকচারের কাজ করা কখনোই সম্ভব নয়। এজন্য শুরুতে স্টাকচারের কাজটি করা হয়। বর্তমানে ঘাটলার স্ট্রাকচার, বসার জায়গা এবং শেড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন পুকুরের পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুকুরের তলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং একটি সাবমার্জিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে পানি হয়ে গেলে সেখানে মাছ চাষ এবং ছোট ছোট শিশুদের সাতার শেখার কার্যক্রম নেওয়া হবে।
এছাড়া ধুনট উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে মোট ৮ টি ইউনিয়ন পরিষদের(ধুনট সদর, মথুরাপুর, গোসাইবাড়ি, ভান্ডারবাড়ি,চৌকিবাড়ি, চিকাশী,এলাঙ্গী,গোপালনগর) মেরামত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কাজ গুলি সম্পূর্ণভাবে অনলাইন ভিত্তিক ইজিপিতে দরপত্র আহবান করা হয় যাদের টেন্ডার আইডি যথাক্রমে: ৯৬৪০১৬, ৯৬৪০১৭, ৯৬৪০১৮, ৯৬৪০১৯. এবং এগুলো বহুল আলোচিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইজিপি টেন্ডার আইডি ৯৮৯০৩৯ এর মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত টেন্ডার সমূহে পিপি আর অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চারটি টেন্ডারের মধ্যে দুইটি কাজ ধুনটের স্থানীয় ঠিকাদার পান, একটিতে সিরাজগঞ্জের একজন ঠিকাদার এবং একটি শেরপুরের একজন ঠিকাদার পান। উপজেলা প্রকৌশলী আরো জানান, কিছু কিছু ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা এত টাই খারাপ ছিলো যে সেখানে এস্টিমেটের নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক দরজা জানালা সংস্কার করতে হয়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের ছাদ দিয়ে পানি পড়ত,শেওলা ও ময়লা জমে রেইন ওয়াটার পাইপ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব গুলো বাথরুম ছিলো অকেজো এবং ব্যবহার অনুপযোগী। পানির লাইন গুলো নষ্ট। ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে দীর্ঘদিন কোন মেরামত কাজ হয় নি এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও মেরামতের জন্য কোন প্রকল্প এত দিন না নেওয়ার কারনে ইউনিয়ন পরিষদ গুলো রীতিমতো জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলো। উক্ত পরিস্থিতিতে প্রাপ্ত বরাদ্দ সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হয়।কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর মেরামত করতে গেলে কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি ও স্বৈরাচারী মনোভাব সম্পন্ন জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন সময় ঠিকাদারদেরকে কাজে বাধা প্রদান করা সহ বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদান করতে থাকে। মূলত কাজ টি তারা নিজেরা করে মোটা অংকের অর্থ লুট করার চিন্তা করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা প্রকৌশলী জানান, একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার নিজের রুম ইন্টেরিয়র করার দাবী তুলেন এবং এই কাজ করলে তার ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোন রুম বা বাথরুম এর কাজ না করলেও সমস্যা নাই বলে জানান। কিন্তু উনার এই অযৌক্তিক দাবী রাখা হয় নি, বরং এস্টিমেট অনুযায়ী ঠিকাদার গন কাজ সম্পাদন করেন। সার্বিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত কাজ সমূহ তদারকি করেন এবং উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যৌথভাবে কাজ সমূহ পরিদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত মেরামত টেন্ডারের কাজ বাদে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের আর কি কি কাজ তাদের ইউনিয়ন পরিষদে করা প্রয়োজন তার লিস্ট গ্রহণ করেন এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে তার বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান জানান, উন্নয়ন ও সংস্কারে বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরসহ জনমনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে তা খুবই দুঃখজনক। মূলত বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ মূল্যয়ন করা হয়েছে। অনলাইন বা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কে কাজ দেওয়া হয়ে থাকে। বরাদ্দকৃত অর্থের কাজ নিজেদের মনমত পছন্দের কাউকে দিয়ে করানোর কোন সুযোগ নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: হাসান ইমাম তালুকদার
মোবাইল: 01711412874, 01712197481
ঢাকা অফিস: ৫০/১,পল্টন লাইন, পুরানা পল্টন,পল্টন, ঢাকা।
সিরাজগঞ্জ অফিস: হাউস নম্বর ৪০, মায়া কুঞ্জ, মোক্তার পাড়া, সিরাজগঞ্জ।
Design & Development By HosterCube Ltd.