মাইনুল হাসান: পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি:
এক পাশে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স- পৌর গোরস্থান, অপরদিকে জামে মসজিদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়। মাঝখানেই একটি মাঠ। যেখানে সাপ্তাহিক গরুর হাট এবং কাচা বাজার বসে। এখানে এখন ময়লার ভাগাড়, পাশেই ওজু খানা। দীর্ঘদিন ধরে এ মাঠে ময়লার স্তূপ থাকায় দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে, জনজীবন দুর্বিসহের পাশাপাশি জীববৈচিত্র হুমকিতে। অন্যদিকে পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় পানিবন্দিতে নাকাল পৌরবাসি। এ যেন অভিভাবকহীন পৌরবাসী। দেখার কেউ নেই। দেখেও যেন না দেখার ভান করার মতো। এমন চিত্র বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরের।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখায় বর্জ্য থেকে দূষিত হচ্ছে পানি, বায়ু। ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে জীববৈচিত্রে। হালকা বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে পৌর শহর। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় বিকল্প অন্তত সরু খাল থাকলেও পানি নিস্কাশন হতো। যে খালটি আগে ছিলো এখন নাই। তবে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু না করার ব্যর্থতা স্বীকার করছে পাথরঘাটা পৌরসভাও। তাদের দাবি, বড় আকারের বাজেটের প্রকল্প ছাড়া এমন পরিকল্পনা নেয়া পাথরঘাটা পৌরসভার পে সম্ভব নয়।
পাথরঘাটা পৌর শহরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, আমরা নামাজ পড়ার জন্য এখানে আসি, অজুখানায় অজু করি। তবে এখানকার যে পরিস্থিতি, তাতে অজু করলে পাক পবিত্র হয় কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। পৌর টলসেডের সকল ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই অজুখানার সামনে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি বন্দি থাকে এবং দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপ থেকে বের হওয়া পানি ছড়িয়ে পরে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে, তাছাড়া পরিবেশ দুষিত তো হচ্ছেই। এছাড়াও পাথরঘাটা পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান ফল বিক্রেতারা বর্জ্য ফেলছে যত্রতত্র। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রায়ই। এতসব কিছুর মুলেই রয়েছে জলাবদ্ধতা।
সমাজসেবক মেহেদী শিকদার বলেন, আমাদের কি করার আছে। আমাদের কপাল এমনই। আমরা জনগন এমন ভাবনাই মেয়রের কাছে নাই। দীর্ঘদিন ধরে এ মাঠে ময়লার স্তূপ থাকায় দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে, জনজীবন দুর্বিসহের পাশাপাশি জীববৈচিত্র হুমকিসহ মানুষের স¦াস্থ্য ঝূকিও রয়েছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমান দোকানের আম, কলার ছোলা যত্রতত্র ফেলায় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদি নক্সার খালটি প্রবহমান থাকলে এমনটি হতো না।
পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, রাস্তাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই পৌরসভা পানিবন্দি হয়ে পরে, জনজীবন দুর্বিষহ অবস্থায় থাকে। নক্সায় চিহ্নিত ৫০৫ ও ৩৩৯৬ দাগের খালটিও ভড়াট করে বেদখল। আমাদের জন্য আফসোস যে পাথরঘাটায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হয়নি। খোলা স্থানে আবর্জনা থাকায় নদীর পানি ও মাটিতে মিশছে। বাতাস দূষিত করছে। তাছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খারাপ। এক্ষেত্রে শুধু পৌর কর্তৃপরেই দায়ী নয়, পৌর নাগরিকদেরও দায় আছে।
পৌরসভার ১ন¤¦র ওযার্ডের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান ফাহিম বলেন, আমার বাসার কাছেই এক সময় ৩২ ফুট প্রসস্ত খাল ছিল, যেটি ৩৩৯৬ ও ৫০৫ দাগের খালটিতে মিশেছে যা অবৈধ দখলে। পৌরশহরের সকল খাল যা আস্তে আস্তে দখল হয়ে ভরাট হয়ে গেছে এবং দখলও হয়েছে। ওই খালটি যদি থাকতো হয়তো আজ পৌর শহরের এমন অবস্থা হতো না। মানুষের এখনো বুঝা উচিত খালের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।
পরিবেশবিদ ও পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, আমাদের জন্য আফসোস যে পাথরঘাটায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হয়নি। খোলা স্থানে আবর্জনা থাকায় নদীর পানি ও মাটিতে মিশছে। বাতাস দূষিত করছে। তাছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খারাপ। এ ক্ষেত্রে শুধু পৌর কর্তৃপক্ষেরই দায়ি নয়, পৌর নাগরিকদেরও দায় আছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার সিকদার জানান, খালটি হতে অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য বহু চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি তা মেনে নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছি। আমার বাসার সামনে ৫০৫ ও ৩৩৯৬ দাগের নক্সায় চিহ্নিত সেই খালটি কই। নক্সা পরিবর্তন করে অবৈধ দখল নিয়ে উন্নয়ন কাম্য নয়। গুটি কয়েক লোক লাভবান হচ্ছে আর হাজার হাজার লোক পানিবন্দী এটা ঠিকনা।
এ বিষয় পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, বৃষ্টির কারণে ময়লা সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। একবার ময়লা অপসরণের জন্য গাড়ি পাঠালে কাদা ও ময়লায় আটকে যায়। পৌরসভার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই যেখানে ময়লা রাখা হবে। তাই সেখানে রাখা হয়েছিলো। বৃষ্টি কমলে ময়লা সরিয়ে ফেলা হবে। আর ড্রেনের কাজ চলমান বলেও তিনি জানান।