শাহাদত হোসেন
বিরামপুর, দিনাজপুর প্রতিনিধি,
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ঘাটপাড় এলাকার ছোট যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কাছ থেকে বালু তোলার ফলে, সেতুর পিলারের নিচ থেকে বালু ও মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ
শাহাদত হোসেন, বিরামপুর দিনাজপুর: দূর থেকে দেখে মনে হবে, সেতুর পিলারগুলো ঝুলে আছে। কাছে গেলে দেখা যাবে, ঝুলে থাকা পিলারের নিচের পাইলিংয়ের মাটি ও বালু সরে গেছে। অনেকটা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। এটি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের ঘাটপাড় এলাকার ছোট যমুনা নদীর ওপর নির্মাণ করা সেতু। সেতুর কাছ থেকে তোলা হয়েছে বালু । এতে সেতুর পিলারগুলোর নিচ থেকে বালুও মাটি সরে গেছে।
বিরামপুর পৌর সভার সাবেক কমিশনার আমিরুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশের নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন একটি চক্র। এতে সেতুর পিলারের নিচের মাটি ও বালু সরে গেছে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটিতে অস্বাভাবিকভাবে দুলতে থাকে।
উপজেলার পৌর শহরের ঘাটপাড় এলাকার ছোট যমুনা নদীর ওপরের ওই সেতুর পশ্চিম দিকে উপজেলার পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস। পূর্ব দিকে উপজেলা পরিষদসহ পৌর শহরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। ছোট যমুনা নদীর দুই পারের মানুষ ওই সেতুর ওপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে ও হেঁটে চলাচল করেন। বিশেষ করে দিনাজপুরের ‘সবজি অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত বিরামপুরের ২০টির বেশি গ্রাম থেকে প্রতিদিন সাইকেল ও ভ্যানে করে শাকসবজি পৌর শহরের পাইকারি বাজারে নেন স্থানীয় কৃষকেরা। এসব গ্রাম থেকে মাঝারি আকারের ট্রাকে মৌসুমি ফসল হিসেবে ধান, ভুট্টা ও পার্ট এ সেতুর ওপর দিয়ে শহরের হাটে নেওয়া হয়। এ ছাড়া পশ্চিমের তিনটি হাট থেকে ব্যবসায়িক পণ্যগুলো ভারী ট্রাকে করে এ সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে। প্রতিদিন শেষ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সেতুর ওপর দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুকুন্দপুর, কাটলা, জোতবানী, বিনাইল, পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নসহ পৌরসভা এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য ১৯৯৬ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪২০ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হয়। মেসার্স ইকোনমিক কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০—এর ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সেতু থেকে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অথচ দুই বছর আগে সেতু থেকে উত্তরে প্রায় ৩০ মিটার দূরে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে নিয়ে গেছে একটি মহল। এ ছাড়া সম্প্রতি সেতুর দক্ষিণে প্রায় ৪০০ মিটার দূর থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী মহল নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। ওই এলাকা থেকে বালু তোলা বন্ধের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, জমির মালিক, স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বিরামপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বলেন, সেতুর নিচের বালু সরে যাওয়ার কারণে সেতুটি এখন যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। সেতুর পাশে নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ করতে স্থানীয় ব্যক্তিরা রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও আবেদন করেছিলেন। এটি এখনই সংস্কার করা না হলে যেকোনো সময় একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত তাসনীম বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বালুমহালের ইজারাদারকে বালু না তোলার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সেখানে আর বালু নেই।’ বিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, সেতুটির পিলারের নিচে আশপাশের মাটি ও বালু সরে গেছে। সেতুটির ধারণক্ষমতা কম থাকায় এটির ওপর দিয়ে দুটি বড় গাড়ী চলাচল করতে পারে না। সেতুটির ধারণক্ষমতা বাড়াতে এক মাস আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।