ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আগামী বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবারই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিষয়ে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। একইসঙ্গে রাশিয়ার পরিকল্পনার কথা আগেভাগেই প্রকাশ করে দেশটির সম্ভাব্য হামলা রুখে দেওয়ার চেষ্টার কথাও জানিয়েছেন তারা। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাসভবন হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জ্যাক সুলিভান আবারও বলেছেন যে, ইউক্রেনে যেকোনো দিন হামলা করতে পারে রাশিয়া। একইসঙ্গে হামলার শিকার হলে ইউক্রেনকে সহায়তার কথাও পুনর্ব্যাক্ত করেছে বাইডেন প্রশাসন।
বুধবার ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অনুষ্ঠানে জ্যাক সুলিভান বলেন, ‘আমরা কোনো দিনের কথা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা বলে আসছি যে, আমরা এমন এক অবস্থায় রয়েছি, যখন যেকোনো দিন ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে। এটি এমনকি অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগে সামনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে।’
পরে সিবিএস’র ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে দেওয়া পৃথক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের এই ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার বলেন, ‘সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড আমরা রক্ষা করবো। এবং আমরা মনে করি, রাশিয়া আমাদের এই বার্তাটি পুরোপুরি জানে।’
অবশ্য যাকে নিয়ে এতো সংকট সেই ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই সামরিক জোটের সদস্য হতে আগ্রহী এবং মূলত এই জায়গাতেই রাশিয়ার আপত্তি রয়েছে।
এদিকে বুধবারই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সম্ভাবনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবিও। ‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে রোববার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘রুশ হামলার বিষয়ে সামনে আসা রিপোর্টগুলো নিশ্চিত করার মতো অবস্থানে আমি নেই।’
তবে রাশিয়া যেকোনো দিন ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলে উল্লেখ করেন জন কিরবি। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি। আবার এসব তথ্যের সবগুলোই গোয়েন্দা সংস্থার এক্সক্লুসিভ তথ্য নয়। সোজা দৃষ্টিতে যা দেখা যায়, সেসব তথ্যও এর মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি রুশ সেনা অবস্থান করছে।’
উল্লেখ্য, ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। হামলার আশঙ্কায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ারও নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন। বহু দেশ তাদের কূটনীতিক ও পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে দীর্ঘ এক ঘণ্টার এই ফোনালাপে চলমান ইউক্রেন সংকট সমাধানের পথে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আর এরপরই আগামী বুধবার ইউক্রেনে রুশ হামলা হতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে।