জয়সাগর নিউজ ডেস্ক:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করা হয়েছে।
আজ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। এ গুলো হলো - মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; শিক্ষা মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; খাদ্য মন্ত্রণালয়; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ভূমি মন্ত্রণালয়; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; কৃষি মন্ত্রণালয়; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রেলপথ মন্ত্রণালয়; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়; পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; ড.আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রণালয়; হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; মিজ শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন ধর্ম মন্ত্রণালয়; মিজ ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মিজ নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।
যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন উপদেষ্টারা:
উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টারা দায়িত্ব পালনকালে কী কী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কারণ, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিদ্যমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলা নেই।
তবে, বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সমান পদমর্যাদাসম্পন্ন হবেন প্রধান উপদেষ্টা। একইভাবে মন্ত্রীর সমান মর্যাদার বলে গণ্য হবেন উপদেষ্টারা। সেই হিসাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীদের সব সুবিধা ভোগ করবেন উপদেষ্টারা। পরবর্তীতে দায়িত্বপালন শেষ করে তারা যখন সরকার ছাড়বেন, তখন তারা সবাই সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব ছাড়ার পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই বছর আবাসিক সুবিধা ভোগ করবেন।
দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি মাসিক বাড়ি ভাড়া পান ১ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা পান ৩ হাজার টাকা। একই সুবিধা ভোগ করবেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও।
প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ছাড়াও, যাতায়াত খরচ, বাড়িভাড়া, ডেইলি অ্যালাউন্স, ইনস্যুরেন্স সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, নিজ দপ্তর এবং অন্য টেলিফোন ব্যয়, চিকিৎসা সেবাসহ আরও অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন সরকারপ্রধান; যার পুরো ব্যয়ভারই রাষ্ট্রের। নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্যও এসব খরচ পুরোটাই বহন করা হবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণত নির্বাচিত হওয়ার পর একটা সরকারি বাসভবন পান। এর সাজানো থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার। কেউ চাইলে নিজের বাড়িতে অথবা অন্য কোথাও বাড়িভাড়া নিয়েও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সেই বাড়িও সরকারি টাকায় অত্যাধুনিক বিলাসবহুল করে সাজিয়ে দেওয়া হবে। বাড়িভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা পান প্রধানমন্ত্রী। তার বাড়ির নিরাপত্তায় থাকেন স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। বর্তমান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছে বঙ্গভবন সূত্র।
প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রধান উপদেষ্টাকেও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, পানির বিল যত খরচই হোক না কেন, সবকিছুই দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। দেশ এবং দেশের বাইরে যাতায়াত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে টাকা খরচ হয়, তাও সম্পূর্ণ বহন করে রাষ্ট্র। দেশের মধ্যে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে, তার জন্য বরাদ্দ থাকে বিলাসবহুল রেলওয়ে সেলুন কোচ। পরিবারের কোনও সদস্য থাকলে, তারাও ফ্রিতে যাতায়াত করতে পারেন রেলে। এছাড়াও বিমানে ভ্রমণে যে খরচ হয়, তাও বহন করে রাষ্ট্র। আকাশপথে ভ্রমণের সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে, বাৎসরিক ২৫ লাখ টাকার ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ পান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও প্রতিদিন তিন হাজার টাকা পান তিনি। প্রধান উপদেষ্টাও একই সুবিধা ভোগ করবেন।
একইভাবে মন্ত্রিসভার একজন পূর্ণমন্ত্রীর সমান বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা। দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কাউকেই তাদের বেতনের জন্য কোনো কর পরিশোধ করতে হয় না। সেক্ষেত্রে একজন উপদেষ্টাকেও রাষ্ট্র একই সুবিধা দেবে।
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য পান ৭৫ হাজার টাকা। সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি পান মন্ত্রীরা। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচ বহন করে সরকার। সেই মোতাবেক উপদেষ্টারাও একই সুবিধা ভোগ করবেন।
এছাড়া উপদেষ্টারা সরকারি খরচে রেল ভ্রমণ ও বিদেশ ভ্রমণের খরচ পাবেন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারের একজন পূর্ণমন্ত্রী বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবনের সুবিধা পান। তার বাসার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করে সরকার। সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ছাড়াও বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা, সেইসঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরনের সেবা খাতের বিল, বিমান ভ্রমণের জন্য বিমা সুবিধা হিসেবে ৮ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন একজন মন্ত্রী। এছাড়াও মন্ত্রীরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী পান। বাসস্থান থেকে অফিস বা অফিস থেকে বাসস্থানে যাতায়াতের জন্য খরচ পান। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ খরচও পান তারা। এছাড়া অন্তত দুজন গৃহকর্মীর ভ্রমণের খরচ পান একজন মন্ত্রী। এই সবগুলো সুবিধাই নতুন সরকারের উপদেষ্টারা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান। আরও পান একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন। এসব সুবিধাও দেওয়া হবে উপদেষ্টাদের।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহাবুব হোসেন জানান, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন। উপদেষ্টারাও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সেক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের বিদ্যমান সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: হাসান ইমাম তালুকদার
মোবাইল: 01711412874, 01712197481
ঢাকা অফিস: ৫০/১,পল্টন লাইন, পুরানা পল্টন,পল্টন, ঢাকা।
সিরাজগঞ্জ অফিস: হাউস নম্বর ৪০, মায়া কুঞ্জ, মোক্তার পাড়া, সিরাজগঞ্জ।
Design & Development By HosterCube Ltd.