আশিক হাসান সীমান্ত রাজবাড়ী :
পাটের রাজধানীখ্যাত রাজবাড়ী এবছর পাটের ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তীব্র দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গাছের বাড়ন্ত কম হয়েছে। অনেক চাষি সেচের মাধ্যমে পানি দিলেও আশানুরুপ ফলন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে চাষিরা।
দেশের মধ্যে পাট উৎপাদনে অন্যতম জেলা ফরিদপুর এর পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলা । কিন্তু এবছর দাবদাহের কারণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। প্রচ- খরায় পাটের চারা এবার তেমন বাড়েনি। পাট কাটার মৌসুম শুরু হলেও বেশির ভাগ জমিতে পাটগাছের উচ্চতা বাড়েনি। এর বেশির ভাগই চিকন। গাছের কা-ও শক্ত হয়নি। সম্প্রতি সময়ে কয়েকদিন বৃষ্টি নামলেও লাভ হয়নি। কারণ আর কয়েকদিনের মধ্যেই পাট কাটা শুরু হবে। কিন্তু বৃষ্টি না থাকায় পাট পঁচানোর ব্যবস্থা করতে না পারায় পাট কাটতে পারছেন না কৃষকরা। কিছু জমিতে সেচ দিয়ে আবাদ করলেও তাতেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।
একজন পাটচাষি বলেন, ‘এক একর জমিতে পাট আবাদ করতে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ মণ। কিন্তু এবার উৎপাদন হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ মণ। এরপর কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচও বেশি হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব।
আরেক চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচ- খরায় এবছর পাটের বাড়ন্ত একদমই হয়নি। ঝিমটি মেরে ছিল, চিকন রয়েছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের ফলন হয়নি। এছাড়া খরার সময় পোকারও আক্রমণেও ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি নামলে পোকার হাত থেকেও বাঁচতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা বেতন দিতে হয়, সঙ্গে খাবারও দিতে হয়। তাছাড়া ওষুধ ও কীটনাশকের দামও বেড়েছে, শুধু কৃষকের ফসলের দাম বাড়েনা।’
পাটচাষি কাশেম শেখ বলেন, ‘এখনও পাট কাটা শুরু করিনি, তবে গাছ দেখে বোঝা যাচ্ছে ফলন এবার অর্ধেকে নেমে আসবে। যদি দাম ভালো পাই তাহলে লোকসান হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানির অভাবে পাটের ফলন ভালো হয়নি, পাট কেটে জাগ দেব সেই পানিরও অভাব। পাট চাষে একটু ঝামেলা হয়, একারণে প্রতিবছর ৩ একর জমিতে পাট চাষ করি। কিন্তু এবার মাত্র এক একর জমিতে চাষ করেছি। পাটের বদলে ভুট্টা চাষ করেছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৭২ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে। জেলায় এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯শ ৫ মে. টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বলেন, ‘প্রচ- খরার কারণে পাটের ফলন কিছু জায়গায় ভালো হয়নি। সেচ দিয়ে যারা চাষাবাদ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে পাট কাটা শুরু না হওয়ায় ফলনের বিষিয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে যারা পাট আবাদ করেছে তারা বৃষ্টি পেয়েছে। একারণে তাদের ফলন ভালো হয়েছে। পরে যারা আবাদ করেছে। তারা বৃষ্টি না পাওয়ায় তাদের ফলন ভালো হয়নি। তাছাড়া সেচ দিয়েও অনেকে চাষ করেছে। তবে সর্বোপরি সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাট চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষিরা।’