মো: গোলাম কিবরিয়া রাজশাহী :
রাজশাহীতে এস আলম গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ছয় ব্যাংকে আমানতের টাকা উত্তোলন নিয়ে দুর্দশার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। দিনের পর দিন ব্যাংকে ঘুরেও তুলতে পারছেনা টাকা। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংক গুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক পিএলসি।
উল্লেখিত ৬ টি ব্যাংকের আমানতকারী সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিজে টাকা রেখে সেই টাকা তুলতে না পারা তারা প্রচণ্ড বিরক্ত এবং অপামানজনক অবস্থায় পড়েছে। একই সাথে রয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসৌজন্য মূলক আচারণ। গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, গত ৯ এবং ১০ সেপ্টম্বর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে টাকা উত্তেলনে এসে এক গ্রাহক হেনস্তার স্বীকার হন। অপর দিকে অভিযোগ উঠেছে, টাকা নেই অযুহাতে ব্যাংকে সাধারণ আমানতকারীদের ৫,০০০/- অথবা কোন কোন গ্রাহককে কোন টাকা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে কোন কোন গ্রাহককে মোটা অংকের টাকাও পরিশোধ করা হচ্ছে। অথচ গত আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে ব্যাংকে ঘোরা ঘুরি করে অনেক গ্রাহ নূন্যতম প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলণ করতে পারছেনা না।
ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের সীমা ৫ লাখ হলেও এসব ব্যাংকে দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা। আবার কোন কোন ব্যাংকে তাও দিতে পারছেনা। গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারলে ব্যাংকের ওপর আস্থা হারাবে বলে গ্রাহকরা জানান। তাদের অভিযোগ এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন, চেক ক্লিয়ারিং কোন ভাবেই লেনদেন করা যাচ্ছেনা এসব ব্যাংক থেকে।
একই সাথে ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক পিএলসি ব্যাংকের তারল্য সংকট প্রকট হওয়ায় অনেক গ্রাহকদের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আদৌ তাদের আমানত নিরাপদ ফিরে পাবেন কি না। উল্লেখ্য, নগদ অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং এসব ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকটের কারণে নিত্যকার সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একের পর এক এস আলম গ্রুপের কুকীর্তি দৃশ্যমান হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এস আলম গ্রুপ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এসব ব্যাংক থেকে, যার পুরোটাই খেলাপি হওয়ার পথে। এদিকে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়ায় বড় রকমের তারল্য সংকটে পড়েছে এসব ব্যাংক। ২০১৭ সাল থেকে এস আলম গ্রুপ এসব ব্যাংক থেকে দেদার টাকা সরালেও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অর্থসংকট সামনে আসে ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে। বর্তমান সময়ে দিন দিন আরও নামী-বেনামী ঋণের নামে পাচারকৃত টাকার তথ্য বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পর নতুন গভর্নর দায়িত্বে আসা আহসান এইচ মনসুর এসব ব্যাংককে তারল্য সংকট সামাল দিতে আর টাকা ধার দেয়া হবে না এ তথ্য প্রকাশ করার পরপরই ব্যাংক গুলোতে টাকা উত্তেলনের জন্য গ্রাহকদের ভীড় বাড়তে থাকে। স্থানীয় ব্যাংক ম্যানেজারগণ জানায়, ব্যাংকে টাকা জমা পড়ার চেয়ে উত্তোলনের পরিমাণ বেশী হবার কারণে কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।