স্টাফ রিপোর্টার:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে তিন ফসলি জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) কাটার মহোৎসব। পুকুর খননেন নামে কাটা হচ্ছে ফসলি জমি, সেই মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায়। ফলে ফসলি কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পতিত ভূমিতে। দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।উপজেলার সোনাখারা গ্রামে রাজু গং ২৫ বিঘা এবং পাশের গ্রাম রুপাখারায় আবু তালেব ২০ বিঘা তিন ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে পুকুর খনন করছেন। বাঁধা দিতে গেলেই সাধারণ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এসব ভূমিদস্যুদের সিন্ডিকেট ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় পুকুর খননের নামে শত শত বিঘা আবাদি কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা মালিকদের নিকট চড়া মূল্যে বিক্রি করছে মাটি খেঁকো এসব ভূমিদস্যুরা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি পুকুর সমান গভীর হয়ে আছে। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক ও অবৈধ ট্রলিভর্তি করে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এসব যানবাহন চলার কারণে ধূলা বালুতে আচ্ছন্ন হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়েছে। রাস্তায় চলাফেরা করতে মানুষের শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় জনগন দিশেহারা হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। হুমকির মধ্যে পরছে হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ঘরে ঘরে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পরছে। এতে করে জনমনে বাড়ছে ব্যাপক ক্ষোভ।এদিকে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। কখনও কখনও ভাটা মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি বিক্রি করতে উৎসাহিত করছেন জমির মালিকদের। অনেকের ফসল ভর্তি জমির ওপর দিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। ফলে জমির ফসল হারিয়ে নির্বিকার হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় এক কৃষক বলেন, এভাবে মাটি কাটা হলে ফসলি জমি আর থাকবে না। ইট ভাটাগুলো যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি মাঠ সব পুকুর হয়ে যাবে।
অপর দিকে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বিদ্যালয় গুলোতে উপস্থিতির হার কমতে শুরু করেছে।
ছাত্রছাত্রীরা জানায়, স্কুলে যেতে ধূলায় আমাদের জামা কাপর নষ্ট হয়ে যায়। ধুলাবালির কারণে দিনের বেলায় জানালা খুলে রাখা যায় না। আমরা বাড়ীতেও খোলা জায়গায় পড়তে পারি না, খাইতে পারি না। আমরা দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পরছি।অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা মিলে প্রায় ৫৮টি ইটভাটার মধ্যে মোট ইট উৎপাদন হয় ১’শ ৮০ কোটি। উৎপাদিত ইটের কাঁচামাল হিসেবে ৭০ শতাংশ মাটি লাগে। যার অধিকাংশ মাটি নেওয়া হয় রায়গঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। দীর্ঘ দিন যাবৎ এ এলাকায় চলছে এ মাটি কাটার ধ্বংসযজ্ঞ। মাটি ব্যাবসায়ির সিন্ডিকেট ও অবৈধ ইটভাটার মালিক মিলে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অবাধে অবৈধভাবে পুকুর খননের কাজ দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে উক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টিসহ পরিবেশের ভারসাম্য, জীব বৈচিত্র্যসহ খাদ্য নিরাপত্তা মারাক্তকভাবে হুমকির মুখে পরেছে।সরকারী গেজেটে প্রকাশিত, মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রন ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন বাক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোন বাক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহলে তিনি অনাধিক ২(দুই) বৎসরের কারাদ- বা ২(দুই) লক্ষ টাকা অর্থ দ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নিষিদ্ধ যে, নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যাবহার কারিরা কোন ভারী যানবাহন ইট ও ইটের কাঁচামাল পরিবহন করিতে পারিবে না। যদি কোন বাক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহলে তিনি ১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদ-ে দ-িত হইবেন।
এসব আইন থাকার পর ও ভুমি দস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে এসব অবৈধ কর্মকা- প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহতি করার পরও প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে এলাকাবাসীর মনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক এলাকার একাধিক ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন, পাশের জমিতে মাটি কাটার ফলে আমাদের জমির পাড় ভেঙ্গে যায়। জমিতে সেচের পানি আটকে রাখা যায় না। যার কারণে জমিতে ঠিকমত ফসল ফলানো যাচ্ছেনা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে পূর্বেই অবহিত করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার মাটি ভর্তি ট্রাক ও ট্রলিগুলো নেওয়া হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে। ফলে রাস্তাগুলো উঁচুনিচু এবং বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকা ধূলা বালুতে আচ্ছন্ন হয়ে যাতায়াতে নানা শ্রেণীর মানুষের শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান।