সাব্বির মির্জা (তাড়াশ) প্রতিনিধি :
কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় "অকালবোধন"। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী মনে করা হয়, দেবীর দুর্গার মর্তে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছরটা পৃথিবী বাসীর কেমন কাটবে। এবার দেবী দুর্গা আসছেন দোলায় চড়ে আর দেবী দুর্গা বা উমা কৈলাসে ফিরবেন ঘটকে করে যার অর্থ ছত্রভঙ্গ।
এ বছর ২০২৪ সালে মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, বুধবার, মহাপঞ্চমী - ৮ অক্টোবর, মহাষষ্ঠী- ৯ অক্টোবর, মহাসপ্তমী - ১০ অক্টোবর, মহাঅষ্টমী - ১১ অক্টোবর, মহানবমী - ১১ অক্টোবর এবং মহাদশমী - ১২ অক্টোবর। শাস্ত্রমতে আরো বলা হয়ে থাকে সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমিতে গমন হয়। সাধারণত প্রতি বছর সপ্তমী ও দশমী কী বার পড়ছে তার ওপর নির্ভর করে দেবীর কিসে আগমন এবং গমন সেটা বোঝা যায়। শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ শেষ হতে না হতেই ধন সম্পদের দেবী লক্ষী পুঁজা শুরু হবে ঠিক আড়াই দিন পরে। এভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী চিরাচরিত একের পর এক পুঁজা অর্চনা শুরু হবে। আর এজন্য অনেকই বলে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। শুভ মহালয়ার থেকে দুর্গা পুঁজার ক্ষণগননা শুরু হয়। তাই ২ অক্টোবর, বুধবার থেকে শুরু হবে মন্দিরে মন্দিরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পুঁজা, শঙ্খের ধ্বনি ও চন্ডিপাঠের মধ্যে দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রন জানানো হবে। বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ শারদীয় দুর্গা পুজা নির্বিঘ্নে করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনার্থী ও ভক্তদের সামাজিক দুরত্ব মেনে প্রতিমা দর্শন ও অঞ্জলি প্রদান, ব্যাপক অলোকসজ্জা না করা সহ বেশ কিছু নির্দেশনা। উপজেলার বিভিন্ন পাল পাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে কারিগর গণ সুনিপুণ হাতে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, স্বরস্বতী, অসুর, সিংহ, ময়ুর, পেঁচা, ইদুর, হাঁস, সাপ, মহাদেবের মৃত্তিকা মূর্তি তৈরী করছেন। প্রতিমা তৈরী এবং প্রতিমায় রং তুলির আচর যথাসময়ে শেষ করতে দিবা রাত্রি সমান্তরালে কাজ করছেন। কারিগর গণ জানিয়েছেন, নানা প্রতিকুলতার মধ্যে তাদের এই পেশা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। যে মুজুরী পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে তাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। এদিকে প্রতি বছরই প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ছে। তবে শুধুমাত্র পারিশ্রমিক নয় মায়ের ভক্তি পেতেই তাকে প্রকৃত রূপে ফুটিয়ে তুলতে পরিশ্রম করেন এবং তার শক্তিতেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে পূজা উদযাপন কমিটির লোকজন ও প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি হিন্দু নর-নারীরা পূজার কেনা-কাটা সহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে সময় ব্যয় করছেন। তাড়াশ পৌরসভায় ও সদর ইউনিয়ন মিলে -১৫টি, মাধাইনগর ইউনিয়নে -৬টি, দেশীগ্রাম ইউনিয়নে -৯টি, তালম ইউনিয়নে -৮টি, বারুহাঁস ইউনিয়নে-৪টি, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নে-২টি, নওগাঁ ইউনিয়নে-১টি সর্বমোট ৪৫ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তাড়াশ উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ সান্যাল। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছই প্রশাসনিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতায় পেয়ে আসছি। এছাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দ ও স্থানীয় ব্যক্তি বর্গের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত সফলতার সহিত বিভিন্ন পূজা উৎসব উদযাপন করে আসছি। আশা করছি এবারও সফলতার সহিত শারদীয় দুর্গা পূজা সম্পন্ন হবে। বাকীটুকু মা দুর্গাদেবী ও ভগবানের কৃপা।
পল্লী বিদ্যুৎ তাড়াশ জোনাল অফিস এর ডিজিএম নিরাপদ দাস জানান, পূজার এই কয়টা দিন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ থাকবে বলেই আশা করছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ বা জাতীয় গ্রিডে কোন সমস্যা না হলে বিদ্যুৎ এর সমস্যা হবে না। তাছাড়া তাড়াশ উপজেলায় ৪৫ টি পূজামন্ডবের প্রত্যেকটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। তবে আপত কালীন ব্যবস্থা হিসাবে প্রত্যেক পূজামন্ডবে বিদ্যুৎ এর পাশাপাশি জেনারেটর রাখার জন্য সকল পূজা মন্ডবের কমিটি'র নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোঃ আসলাম হেসেন বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও নিবিঘ্নে করতে পুলিশি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি পুঁজা মন্ডপে আইন-শৃঙ্গলার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও সনাতন ধর্মের লোকজন যাতে নির্বিগ্নে পূজা উদযাপান করতে পারেন সে জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।