স্টাফ রিপোর্টার:
অনিয়ম, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সিরাজগঞ্জে সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।উদ্ধৃত পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে গভর্নিং বডির জরুরী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
জানা যায়, ২২ আগষ্ট (২০২৪ইং) বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে কলেজ ক্যাম্পাসে কঠোর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকে অপসারনের দাবী জানান। শিক্ষার্থীরা বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।লিখিত অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে না রেখে নিজের ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন করেন। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ব্যতীত ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন একাউন্ট থেকে গোপনে অনুমোদন ছাড়াই টাকা উত্তোনন করেন। সারা বছর নিয়ম না মেনে গোপনে ছাত্র ভর্তি করেন এবং অনলাইনে ছাত্রদের বেতন ইচ্ছেমত নির্ধারণ করেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিটে গড়মিল পরিলক্ষিত হলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভাউচারাদি সরবরাহে কাল ক্ষেপন করেন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে নতুন বেঞ্চ তৈরির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদারকে কাজ প্রদান করেন। অনলাইনে ছাত্রদের বেতন ও অন্যান্য ফি বাবদ আদায়কৃত ৪৭ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতার কারণে আটকে আছে। ছাত্রদের আইডি কার্ডের জন্য দুই বছরে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও কোন সুবিচার না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে উল্লেখ করেন।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ২২ আগষ্ট (২০২৪ইং) বৃহস্পতিবার গভর্নিং বডির ০৬ তম জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত গভর্নিং বডির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সিরাজগঞ্জ বলেন, সকাল থেকে সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বর্তমান প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবী করছেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উল্লেখিত অভিযোগ সভায় উপস্থাপন করেন।
সভায় উপরোক্ত সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও গভর্নিং বডির সভাপতি মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত সকল সদস্যকে অনুরোধ করেন। এসময় প্রধান শিক্ষক বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলে তিনি মেনে নেবেন।
বিস্তারিত আলোচনান্তে সর্বসম্মতিক্রমে নি¤েœাক্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিষ্ঠানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্তকালে নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: মাসুদ আলমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রাপ্ত আবেদনে উল্লেখিত অভিযোগসমুহের বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় তার হেফাজতে থাকা অফিসের চাবিসহ অন্যান্য সকল রেজিস্টার এবং কাগজপত্রাদি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিকট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়। উল্লেখ্য, সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন বিধি মোতাবেক প্রাপ্য সকল ভাতাদি তিনি পাইবেন বলে বরখাস্ত পত্রে উল্লেখ করা হয়। এদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক এবং সচেতন মহল অধ্যক্ষ আব্দুল হালিমকে স্থায়ী ভাবে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।উল্লেখ্য, সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এর আগেও কয়েক বার উঠে। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও বিগত সরকারের সময় উক্ত তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা পড়ে যায়। অদৃশ্য শক্তির কালো ছায়ায় বার বার তদন্তের কার্যক্রম হারিয়ে যায়। বিগত সরকার পতন হওয়ার কারণে এবার তাকে আর কেউ রক্ষা করতে পারেনি বলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী মনে করেন।সূত্রে জানা যায়, গত ০১-১১-২০২১ ইং তারিখে যোগদানের পর থেকে অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম আর্থিক অনিয়মসহ নানাবিধ দুর্নীতি করতে থাকেন। তাকে এ সমস্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বলার পরও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো শিক্ষকদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং চাকরী হতে বরখাস্তের হুমকি দিতেন।
যোগদানের ১ বছরেই প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম অবৈধ উপায়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অপকর্মের খবর জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বিগত সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না হয়নি। বর্তমানে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় উক্ত প্রতিষ্ঠানে স্বস্তি নেমে এসেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: হাসান ইমাম তালুকদার
মোবাইল: 01711412874, 01712197481
ঢাকা অফিস: ৫০/১,পল্টন লাইন, পুরানা পল্টন,পল্টন, ঢাকা।
সিরাজগঞ্জ অফিস: হাউস নম্বর ৪০, মায়া কুঞ্জ, মোক্তার পাড়া, সিরাজগঞ্জ।
Design & Development By HosterCube Ltd.