নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। এই কার্যালয় থেকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভার স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মত শয্যা না থাকলেও ১০টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইপিআই, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, জাতীয় কৃমি সপ্তাহ, করোনা ভ্যাকসিন প্রদান, যক্ষ্মা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান, মৃত্যুের সনদ প্রদান সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে। সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে ৩১ডিসেম্বর ২০১৯ইং তারিখ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন নন বিসিএস, ২০১০ সালে এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম। তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম মান সম্মান এর ভয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও অফিসের লেমপ্লেটে, অফিসের চিঠি আদান প্রদান সহ সকল কাগজপত্রে তার নামের পদবীতে ভারপ্রাপ্ত শব্দটি উল্লেখ করেন না। তবে তিনি এখনো মেডিকেল অফিসার পদটি ব্যবহার করে বেতন ভাতা উত্তোলন কর আসছেন। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে আইনে ভারপ্রাপ্ত লিখতে বাধ্য হলেও, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চলছেন এই মেডিকেল অফিসার। ২০২০ সাল থেকেই নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তারা যোগদানের পরে দেখতে পান উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয় পরিচালনা হয় মেডিকেল অফিসার দিয়ে, তখন নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইফতেখার আহমেদ তসলিম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সহকারি পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব প্রদানের পরপরই তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ এর জোড়ালো তদবিরে ৩ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে চলে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্টেশনারী, পরিবহন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিলের উপর ৩৫ থেকে ৪০ কর্তন করে অর্থ আত্মসাত। ২০২০ সাল থেকে করোনা টিকা বিল, ইপিআইয়ের বাজেট, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, কৃমি সপ্তাহ, মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের বাজেটের টাকাও করেন আত্মসাত।
সম্প্রতি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ২২লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। কোন কর্মচারী দ্র্নূীতির প্রতিবাদ করলে তার উপর চলে শোকজের মাধ্যমে নির্যাতন, অফিস রুমে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ।
এছাড়াও মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর থেকে স্বাস্থ্য সহকারি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের সাথে অসৌজন্য আচারন, গালিগালাজ, সর্বসময়ে বাপের বয়সী কর্মচারীসহ সকলের সাথে ‘তুই’ বলে ডাকাডাকি করে থাকেন।
ইতিমধ্য একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শককে মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে সবার সামনে জামা খোলানো, এক সিএইসসিপিকে চুল বাঁধা নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারি, সিএইসসিপি, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও পরিদর্শকরা অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে অতি গোপনে উপজেলা কার্যালয়কে ভারপ্রাপ্ত মুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেছেন।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সুত্র থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করলেই, অবশ্যই পদবীর পরে ভারপ্রাপ্ত শব্দটি লিখতে হবে। আর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ৬মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। অপরদিকে একই উপজেলার বাসিন্দা হলে, সেই উপজেলার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
অপর একটি সুত্র থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পোস্টটি চাকরির শেষার্ধ প্রোমোশন জনিত একটি পোস্ট। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে প্রোমোশন পেয়ে সিভিল সার্জন পদে পদোন্নতি হয়। কিন্তু মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম নন ক্যাডার ও এডহক থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ায় কোনদিন প্রোমোশন পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। কেননা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হতে হলে অবশ্যই বিসিএস ক্যাডার হতে হবে।
স্বাস্থ্য সহকারি এ্যাসোসিশনের নেতারা বলছে, সাড়ে ৪ বছর ধরে এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের নামে বিভিন্নভাবে মানসিক নিযাতন করে আমরা গলাকেটে জবাইকৃত মুরগির মত ছটফট করছি। মহাপরিচালক মহোদয়ের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি, দ্রুত আমাদের ভারমুক্ত করুন।
সিএইসসিপি এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছে, আমাদের এক সহকর্মী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্যাতন ও দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করার সকল প্রক্রিয়া করেছে। সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে পুনরায় গতিশীল করতে ভারমুক্ত করার জন্য ডিজি মহোদয়ের নিকট জোর সুপারিশ করেন তারা।