সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে ১১টা। আমরা পৌঁছে যাই তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ হাটে। আজ বৃহস্পতিবার নওগাঁ হাটবার হওয়ায় চলছে জমজমাট বেচাকেনা। হাটের প্রবেশপথেই হিন্দুপাড়া। বিশাল জনারণ্যের মাঝে সেখানে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
গত ৬ আগস্ট সকালে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার পর আতঙ্কিত লোকজন বাড়িতে তালা লাগিয়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। কোনো কোনো বাড়িতে বৃদ্ধা মহিলা ছাড়া আর কেউই নেই। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই সারা দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফিরে আসেন মামলা-হামলার শিকার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা বিজয় মিছিলসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। এরই মাঝে ঘটতে থাকে দুর্বৃত্তদের নানা অপকর্ম।
এই সুযোগে পরদিন ৬ আগস্ট সকাল ১০টার সময় পূর্বশত্রুতার জের ধরে গোলজার হোসেনের ছেলে শামসুল শাহ, হাসান আলী শাহ ও আরিফ শাহের নেতৃত্বে একদল হামলাকারী নওগাঁ হিন্দু পল্লীতে হামলা চালায়। প্রথমেই তারা সুশান্ত মহোন্তর (৪২) বাড়িতে আক্রমণ করে।
বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক ভাঙচুর করে। লুটে নেয় বিভিন্ন মালামালসহ স্বর্ণালংকার ও তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা। মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয় সুশান্তর স্ত্রী অর্চনা রানী মোহন্ত (৩৫) ও বৃদ্ধা মা সাবিত্রী রানীর (৯৫) কে।
এতে তারা গুরুতর আহত হন। এরপর পার্শ্ববর্তী বাড়িতে হামলা চালাতে গেলে স্থানীয় জনসাধারণ বাধা দিয়ে প্রতিরোধ করে। এ ঘটনার পরপরই শতাধিক হিন্দু পরিবার ঘরবাড়িতে তালা লাগিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। সেই থেকে সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সুশান্তর স্ত্রী অর্চনা রানী মোহন্তর কাছে হামলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র হিন্দু ছাড়া আর তো কোনো অপরাধ দেখি না। তবে দলীয় নয়, সুযোগ বুঝে প্রতিবেশীরাই এ হামলা চালিয়েছে।’
সুশান্তর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পুলিশসহ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। বলা হয়, তাদেরকে দলীয় ও আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম টুটুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে আশ্বস্ত করেন। সান্ত¡না দেন সুশান্তর পরিবারকে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশসহ প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থলে যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে পুলিশেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে পুলিশ কাজ করবে কিভাবে? এখন তো থানাগুলোতেই শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। যার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কিত হিন্দুরা তাদের ঘরবাড়িতে এখনো ফিরতে পারেনি।’