গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিচ্ছেন চিকিৎসাও। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। নতুন কোনো রোগ বা উপসর্গ দেখা দেয়নি।
রাজধানীর গুলশান- ২ এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন দুজন নার্স। নিয়মিত তাকে দেখতে যান ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. আল মামুন ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ অন্যরা।
৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছর এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। প্রায় দুই মাস রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বাসায় ফেরেন।
কয়েক মাস না যেতেই তার অসুস্থতা বেড়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বছর ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে ফের রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ কিছুদিন আইসিইউতে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। টানা ৮১ দিন চিকিৎসার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া
প্রতিদিন উনাকে দেখতে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের কেউ না কেউ তার বাসায় যান। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসাপত্রে কোনো কিছুর পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে সেটিও করা হয়। অর্থাৎ, যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, ততটুকু করেই উনাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।ডা. জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক
খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন— জানতে চাইলে বিএনপি ও তার চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন দুপুর আর সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়াকে দেখতে ফিরোজায় যান তার মেডিকেল বোর্ডের কোনো না কোনো সদস্য। বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকেন ডা. জাহিদ ও ডা. মো. আল মামুন। তার ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশারসহ (রক্তচাপ) যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন, সেগুলো করেন। খালেদা জিয়ার ভালো-মন্দও জেনে নেন। এরপর তারা চিকিৎসাপত্র দেন।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার নতুন করে কোনো রোগ বা উপসর্গ দেখা যায়নি। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল— জানান চিকিৎসকরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর বাইরে দলীয় নেতাদের কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান না। যদিও চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কিন্তু চিকিৎসকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না
বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন— জানতে চাইলে ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আলহামদুল্লিাহ, ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন উনাকে দেখতে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের কেউ না কেউ তার বাসায় যান। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসাপত্রে কোনো কিছুর পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে সেটিও করা হয়। অর্থাৎ, যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, ততটুকু করেই উনাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা এখন স্টেবল (স্থিতিশীল)। চিকিৎসকরা নিয়মিত তাকে দেখতে যান। ডা. জাহিদ হোসেন নিয়মিত ম্যাডামের বাসায় যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
আমরা তো দেখা করতে চাই। কিন্তু চাইলেই তো হবে না। তিনি এখনও মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন। তাদের পরামর্শে তাকে চলতে হচ্ছে। তারা যখন দেখা করতে বলবেন, আমরা তখন সাক্ষাৎ করতে পারব।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
এদিকে খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বাসায় ফেরার পর বেশ হাসিখুশি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। গত ৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডন থেকে দেশে আসেন খালেদা জিয়া নাতনি, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বড় মেয়ে জাফিয়া রহমান। দীর্ঘদিন পর নাতনিকে কাছে পেয়ে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন তিনি। দিনের বড় একটা সময় নাতনির সঙ্গে গল্প করে সময় কাটত তার।
গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) নাতনি জাফিয়া রহমান লন্ডনে ফিরে গেলে কিছুটা মন খারাপ করেন খালেদা জিয়া। তবে, প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি পত্রিকা পড়েন, এরপর নাস্তা করে কিছুক্ষণ টেলিভিশন দেখেন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করেন। দুপুরে গোসল শেষে ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে খাবার খান। বিকেলের দিকে বাসায় যদি কোনো আত্মীয় আসেন তাদের সঙ্গে গল্প করেন। সন্ধ্যায় তাকে দেখতে আসেন চিকিৎসকরা।
ম্যাডামের অবস্থা এখন স্টেবল (স্থিতিশীল)। চিকিৎসকরা নিয়মিত তাকে দেখতে যান। ডা. জাহিদ হোসেন নিয়মিত ম্যাডামের বাসায় যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি মহাসচিব
চিকিৎসকরা চলে যাওয়ার পর রাতের খাবারসহ ওষুধ সেবন করেন খালেদা জিয়া। এরপর কিছুটা সময় টেলিভিশন দেখেন, কখনও লন্ডনে অবস্থানরত ছেলে তারেক রহমান এবং ছেলেদের বউ ও নাতনিদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। তারপর ঘুমাতে যান। এভাবেই দিন পার হচ্ছে তার।
খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘আগের মতোই আছে’— উল্লেখ করে তার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। তিনি আগের মতোই আছেন। উনার বাসাতে নার্সরা আছেন, চিকিৎসকরাও নিয়মিত তাকে দেখতে আসেন।’
প্রতিদিন দুপুর আর সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়াকে দেখতে ফিরোজায় যান তার মেডিকেল বোর্ডের কোনো না কোনো সদস্য। বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকেন ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. মো. আল মামুন। তার ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশারসহ (রক্তচাপ) যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন, সেগুলো করেন। খালেদা জিয়ার ভালো-মন্দও জেনে নেন। এরপর তারা চিকিৎসাপত্র দেন
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সাত্তার বলেন, চিকিৎসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী ম্যাডামের বাসায় খাবার তৈরি হয়। বাইরের কোনো খাবার ম্যাডাম খান না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। ৮ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর বাইরে দলীয় নেতাদের কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান না। যদিও চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কিন্তু চিকিৎসকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডাম বাসা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দলের নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র মহাসচিব উনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। আগামীতে হয়তো স্থায়ী কমিটির নেতারাও তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো দেখা করতে চাই। কিন্তু চাইলেই তো হবে না। তিনি এখনও মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন। তাদের পরামর্শে তাকে চলতে হচ্ছে। তারা যখন দেখা করতে বলবেন, আমরা তখন সাক্ষাৎ করতে পারব।রাজনীতি নিয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার এখন কোনো আগ্রহ নেই। নিজের শারীরিক অবস্থার দিকে বেশি মনোযোগ তার। উনি (খালেদা জিয়া) না চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কীভাবে দেখা করবেন? ম্যাডাম এখন রাজনীতিতে ছেলের সাফল্য কামনা করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে কারও সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে কথা বলার মতো শারীরিক সামর্থ্য তার নেই। এছাড়া তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার অন্যতম কারণ ছিল দেশের করোনা পরিস্থিতি। মূলত, করোনার কারণেই মহাসচিব ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
কেউ কেউ আবার বলছেন, খালেদা জিয়া মুক্ত নন, তিনি গৃহবন্দি। তার বাসায় কে আসছেন, কে যাচ্ছেন— নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোক। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু-একজন ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন— অভিমত তাদের।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনীতি নিয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার এখন কোনো আগ্রহ নেই। নিজের শারীরিক অবস্থার দিকে বেশি মনোযোগ তার। উনি (খালেদা জিয়া) না চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কীভাবে দেখা করবেন? ম্যাডাম এখন রাজনীতিতে ছেলের সাফল্য কামনা করছেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি দেখভাল করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমান। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এছাড়া আগামীতে নির্বাচন। ফলে, ম্যাডামের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রকাশ্যে খুব বেশি আগ্রহ দেখালেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কীভাবে দেখবেন— সেটিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে তাদের।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: হাসান ইমাম তালুকদার
মোবাইল: 01711412874, 01712197481
ঢাকা অফিস: ৫০/১,পল্টন লাইন, পুরানা পল্টন,পল্টন, ঢাকা।
সিরাজগঞ্জ অফিস: হাউস নম্বর ৪০, মায়া কুঞ্জ, মোক্তার পাড়া, সিরাজগঞ্জ।
Design & Development By HosterCube Ltd.