২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় সন্ধ্যা ৭:৩৭ মিনিট
  1. অপরাধ
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আড়াইহাজার
  4. আদালতপাড়া
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আর্কাইভ
  7. ঈদ আড্ডা
  8. ঈদ আনন্দ
  9. কক্সবাজার
  10. কুমিল্লা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুলনা
  14. খেলাধুলা
  15. চট্রগ্রাম
 

স্মরনীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ভোলা’

প্রতিবেদক
joysagortv
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪ ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ছয় নং দিগলকান্দি ইউনিয়নে শ্যাম বিয়াড়া গ্রামে এক বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে  আবির্ভাব ঘটে একজন ক্ষণজন্মা  পুরুষের যিনি মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন;
তেমনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ওরফে ‘ভোলা’
নতুন প্রজন্মের কাছে এ নামটি অপরিচিত মনে হলেও, একসময় তিনি ছিলেন অত্র অঞ্চলের সকলের অতি পরিচিত প্রিয়মুখ।
তাঁর জন্ম ১৯৪৮ সালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শ্যামবিয়াড়া গ্রামে মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান,  একমাত্র পুত্র সন্তানকে বুকে নিয়ে দুঃখের সাগরে পাড়ি জমান তাঁর অভাগিনী মা
 কিন্তু দুর্ভাগ্য, তীরে ভীড়ার আগেই তরী ডুবে যায়,  দুঃখিনী মায়ের স্বপ্নসাধ ধূলিস্মাৎ হয়ে যায় – একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এক দমকা হাওয়ায়
তিনি ১৯৬৪ সালে সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৬৮ সালে কাগমারি কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন।
কলেজ জীবনের শুরুতেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন, অল্প সময়ের মধ্যেই  তিনি তুখোড় ছাত্রনেতা হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন
তৎকালীন উক্ত কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি ভি. পি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান । কিন্তু হারান না মনোবল ।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন – পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে
টাঙ্গাইলের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে ( গোড়ান-সাটিয়াচড়া) তিনি জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেন । এ ছাড়া হামিদপুর যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর সহযোদ্ধা অনেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে পাড়ি জমালেও, তিনি এদেশের মাটিতেই থেকে যান –
 খান সেনাদের মোকাবেলা করতে । ‘৭১ সালে জুনের প্রথম সপ্তাহে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা নামধারী দুষ্কৃতিকারী কাদের সিদ্দিকীর নাম করে তাঁকে বাড়ি থেকে দত্তগ্রাম স্কুল মাঠে নিয়ে আসে এবং তাঁদের আনুগত্য স্বীকার করে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিতে চাপ সৃষ্টি করে । স্বাধীনচেতা ভোলা অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার না করায়, তাঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় । শুধু তাই নয়, তাঁকে সারাদিন অভূক্ত অবস্থায় বেঁধে রাখা হয় দত্তগ্রাম স্কুল ঘরে
 পরে এই অবস্থায় রাতের আঁধারে তাঁকে ভূঞাপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় ।
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস – যে হাতে একদিন রাইফেল গর্জে উঠেছিলো শত্রু সেনার বিরুদ্ধে, সে হাত শৃঙ্খলিত হলো মুক্তিযোদ্ধা নামধারী গুটিকয়েক কুচক্রীর হাতে
 হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ১০ জুন রাতের আঁধারে তাঁকে ফলদা  নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং গুম করে ফেলা হয় তাঁর লাশ । মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি হত্যাকারীদের অনুরোধ করেছিলেন – তাঁর লাশটা মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে । কিন্তু ঘাতকের দল সেদিন তাঁর অনুরোধে কোন সাড়া দেয়নি । মায়ের কাছে পৌঁছায়নি তাঁর লাশ, জানায়নি তাঁর মৃত্যু সংবাদ ।
দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একাধিকবার ভোলার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের হাত ধরে কেঁদে বলেছেন – ‘আমার অনুগত মুক্তিযোদ্ধারা ভুলবশত যে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে,  তজ্জন্য আমি অনুতপ্ত, আমায় ক্ষমা করে দিন।’ পুত্রহারা জননী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেছিলেন – ‘যাঁরা আমার বুক খালি করেছে, তাঁদের আমি বুকে নিতে পারিনা, পারিনা ক্ষমা করতে।
পরবর্তীতে ভোলার মা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে  পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন করেছিলেন । দুঃখজনক হলেও সত্যি, মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হলেও, এতটুকুন সহানুভূতির উদ্রেক হয়নি শাসকদের হৃদয়ে, বিচার হয়নি ভোলা হত্যাকাণ্ডের । বিচারের বাণী নীরবে – নিভৃতে কেঁদেছে।স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরুলেও, কেন শুরু হলো না ভোলা হত্যাকান্ডের বিচার ? কেন হলো না তাঁর হত্যার রহস্য উন্মোচন ? শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজও কেন  মূল্যায়ন হলো না তাঁর ?  এ প্রশ্ন আজ সবার।
 ভোলা ছিলেন মার্জিত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ববান একজন সুদর্শন পুরুষ। তাঁর স্বভাব ছিল আত্মভোলা ধরণের । সংসারের প্রতিও ছিলেন উদাসীন। তিনি ছিলেন চিরকুমার এবং ভীষণ আড্ডাপ্রিয় একজন লোক । ক্রীড়ামোদী এবং সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি হিসেবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ছিল, তিনি নাটকে ভালো অভিনয় করতেন   আমাকে বড্ড স্নেহ করতেন, তাঁর সমকক্ষ জাঁদরেল অভিনেতা সে সময়ে আর কেউ ছিল না  !  ইতিহাসের পাতায় কোথাও ভোলার নাম লেখা না থাকলেও, সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তাঁর স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে  চিরকাল
দিগলকান্দি ইউনিয়ন বাসির প্রাণের দাবি মাননীয় সরকারের সন্মানিত উপদেষ্টাদের
নিকট  বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ( ভোলা ) এর
প্রতি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রধান করা হউক
এবং প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হউক !,
সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ - বিজ্ঞান প্রযুক্তি

আপনার জন্য নির্বাচিত