শাহাদত হোসেন, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি:
মানুষের স্বভাবগত সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহ চিরন্তন। এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হলো চুল ও দাড়ি। প্রাচীনকাল থেকে চুল ও দাড়ির পরিচর্যা সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যাদের পেশা মানুষের চুল ও দাড়ি কেটে সুন্দর করা, তাদেরই আমরা ‘নরসুন্দর’ বা ‘নাপিত’ বলে চিনি। একসময় এ পেশার কদর ছিল অত্যন্ত বেশি।
আগে নাপিতরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাটিয়া বা টুলে বসে চুল ও দাড়ি কাটাতেন। গ্রামের বৃদ্ধ, যুবক থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত নাপিতের এই সেবার মাধ্যমে নিজেদের চুল-দাড়ি পরিচর্যা করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্যবাহী দৃশ্যগুলো আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। পিড়ি বা খাটিয়ায় বসে চুল-দাড়ি কাটার প্রাচীন রীতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের জীবনে এসেছে পরিবর্তন, যার ফলস্বরূপ আধুনিক সেলুন ও জেন্টস পার্লারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
চুল কাটার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ৭৫ বছর বয়সী ইশার উদ্দিন কাজী জানান, “অনেক বছর আগে বাবার সাথে হাটে গিয়ে চুল কাটতাম। সেই সময়ের চুল কাটার অভিজ্ঞতা ছিল অনন্য। হাটে বাজার নিয়ে আসা, মিষ্টি খাওয়ার এসব মজার স্মৃতি আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে গল্পের মতো শোনাবে।”
তবে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কিছু হাট-বাজারে এখনও সেই প্রাচীন চিত্র চোখে পড়ে। নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষত যারা অত্যাধুনিক সেলুনের খরচ বহন করতে পারেন না, তারা এখনও টুলে বসে চুল-দাড়ি কাটেন। সামছুদ্দিন একজন ভ্রাম্যমাণ গ্রাহক তিনি জানান, “আমি দীর্ঘদিন ধরে হাটে চুল কাটাই। আধুনিক সেলুনে খরচ বেশি হওয়ায় এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে চুল কাটতে আসি এবং আমার ভালোও লাগে।”
বিরামপুর পৌর বাজারের নরসুন্দর দুলাল শীল বলেন, “আমি সপ্তাহে পাঁচ দিন পৌর বাজারে এবং দুই দিন হাটে ভ্রাম্যমাণভাবে কাজ করি। আমার পরিবার দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত। ১৫-২০ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটার মজুরি ছিল মাত্র ৪-৫ টাকা, যা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলত। বর্তমানে চুল কাটতে ২৫-৩০ টাকা, দাড়ি কাটতে ১৫-২০ টাকা লাগে। তবু গ্রাহক পাওয়া কষ্টকর। সারাদিন কাজ করে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই।”
এই হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যের চর্চা এখন সীমিত আকারে টিকে আছে, তবে সময়ের সাথে তা বিলীন হওয়ার পথে।