সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাড়ে ৪ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নন ক্যাডার এক মেডিকেল অফিসার! ২০১১ সালে এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কোন প্রমোশন ছাড়া কিভাবে একজন নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার কিভাবে সাড়ে ৪বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একটি উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করে এই নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় চলছে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ডা: জাহিদুল ইসলাম ২০১১সালে এডহক থেকে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পেয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তায় কার্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১১সালে সেপ্টেম্বর মাসে মেডিকেল অফিসার হিসেবে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে বদলী হয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে থাকেন। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইফতেখার আহমেদ তসলিম পদোন্নতি হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সহকারি পরিচালক হিসেবে চলে যাওয়াকে কাজে লাগিয়ে তৎকালীন স্থানীয় এমপির তদবিরে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্র মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম ২০১১ সালে নিয়োগ পেলেও চাকুরী স্থায়ীকরন হয় ২০২৩ সালে। চাকুরী স্থায়ীকরনের আগে কিভাবে ২০১৯ সালে একটি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম মান সম্মান এর ভয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও অফিসের লেমপ্লেটে, অফিসের চিঠি আদান প্রদান সহ সকল কাগজপত্রে তার নামের পদবীতে ভারপ্রাপ্ত শব্দটি উল্লেখ করেন না। তবে তিনি এখনো মেডিকেল অফিসার পদটি ব্যবহার করে বেতন ভাতা উত্তোলন কর আসছেন। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে আইনে ভারপ্রাপ্ত লিখতে বাধ্য হলেও, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চলছেন এই মেডিকেল অফিসার। ২০২০ সাল থেকেই নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তারা যোগদানের পরে দেখতে পান উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয় পরিচালনা হয় মেডিকেল অফিসার দিয়ে, তখন নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে চলে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্টেশনারী, পরিবহন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিলের উপর ৩৫ থেকে ৪০ কর্তন করে অর্থ আত্মসাত। ২০২০ সাল থেকে করোনা টিকা বিল, ইপিআইয়ের বাজেট, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, কৃমি সপ্তাহ, মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের বাজেটের টাকাও করেন আত্মসাত।
সম্প্রতি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ২২লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। কোন কর্মচারী দূ্র্নীতির প্রতিবাদ করলে তার উপর চলে শোকজের মাধ্যমে নির্যাতন, অফিস রুমে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ।
এছাড়াও মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর থেকে স্বাস্থ্য সহকারি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের সাথে অসৌজন্য আচারন, গালিগালাজ, সর্বসময়ে বাপের বয়সী কর্মচারীসহ সকলের সাথে ‘তুই’ বলে ডাকাডাকি করে থাকেন।
ইতিমধ্য একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শককে মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে সবার সামনে জামা খোলানো, এক সিএইসসিপিকে চুল বাঁধা নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারি, সিএইসসিপি, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও পরিদর্শকরা অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে অতি গোপনে উপজেলা কার্যালয়কে ভারপ্রাপ্ত মুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেছেন।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সুত্র থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করলেই, অবশ্যই পদবীর পরে ভারপ্রাপ্ত শব্দটি লিখতে হবে। আর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ৬মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। অপরদিকে একই উপজেলার বাসিন্দা হলে, সেই উপজেলার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
অপর একটি সুত্র থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পোস্টটি চাকরির শেষার্ধ প্রোমোশন জনিত একটি পোস্ট। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে প্রোমোশন পেয়ে সিভিল সার্জন পদে পদোন্নতি হয়। কিন্তু মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম নন ক্যাডার ও এডহক থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ায় কোনদিন প্রোমোশন পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। কেননা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হতে হলে অবশ্যই বিসিএস ক্যাডার হতে হবে।