১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় সকাল ১১:০৯ মিনিট
  1. অপরাধ
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আড়াইহাজার
  4. আদালতপাড়া
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আর্কাইভ
  7. ঈদ আড্ডা
  8. ঈদ আনন্দ
  9. কক্সবাজার
  10. কুমিল্লা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুলনা
  14. খেলাধুলা
  15. চট্রগ্রাম
 

টাকার ব্যাংক ‘মুঠোফোনে’ বাড়ছে আস্থা

প্রতিবেদক
joysagortv
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ

ঘরে বসে হিসাব খুলতে লাগে না কোনো খরচ। শহর কিংবা গ্রাম— যেকোনো মুহূর্তেই লেনদেন। রয়েছে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- কেনাকাটার বিল, বেতন কিংবা টিউশন ফি পরিশোধ, মোবাইল ফোনের রিচার্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে টাকা পাঠানো— সবই হচ্ছে মুঠোফোনে। এ কারণে দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ এখন ভিড় এড়াতে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখছে। যাদের হাতে এখন মোবাইল ফোন আছে, তাদের অধিকাংশেরই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় করপোরেট বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি শিল্পমালিকরাও মুঠোফোনে লেনদেন করছেন।

• ২০২১ সালে লেনদেন ১০ লাখ কোটি টাকা
• গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ১৪ কোটি 

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ  করেছে। সেখানে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এখন মুঠোফোনে বেশি লেনদেন করছেন। বাড়ছে এজেন্ট ও গ্রাহকের সংখ্যাও। এর বাইরে ডাক বিভাগের সেবা নগদেও নতুন নতুন গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯-এ। এর মধ্যে গ্রামে ছয় কোটি ২৩ লাখ এবং শহরের গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ৯২ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৩০ লাখ এবং মহিলা গ্রাহক প্রায় পাঁচ কোটি। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ জনে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে এমএফএস সেবায় এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল নয় কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। একই সময়ে বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৬১ এজেন্ট।

যেসব পরিষেবা দিচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং

মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম নয়। এর মাধ্যমে পরিষেবা বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা গ্রহণ, টিকিট ক্রয়, স্কুলের বেতন ও বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ এবং সরকারি অনুদানও প্রদান করা যাচ্ছে।

dhakapost
 দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুহূর্তের মধ্যে পাঠানো যাচ্ছে টাকা। মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে / ছবি- সংগৃহীত 

গত ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় গত বছরের (২০২১ সাল) মে মাসে। ওই মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়

এ মাধ্যমে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টের কাছে যেতে হয় না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এ হিসাবে। আবার এ হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেওয়া যাচ্ছে। ফলে একটি মুঠোফোন একেকজনের কাছে একটি ব্যাংক হিসেবেই পরিচিতি পাচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। এমএফএসের লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকটি কারণে এমএফএস সেবার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই মোবাইলে সবধরনের লেনদেন করতে পারছে।

‘শুধু লেনদেনেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- কেনাকাটার বিল, বেতন কিংবা টিউশন ফিও পরিশোধ করা যাচ্ছে এ মাধ্যমে। এছাড়া, গ্রাহক এখন শাখায় না গিয়ে ব্যাংক হিসাব থেকে লেনদেন করতে পারছে। ব্যাংক ঋণ এমনকি আমানতের অর্থও মোবাইলে পরিশোধ করতে পারছে।’

২০২১ সালে এমএফএস সেবায় এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল নয় কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। একই সময়ে বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৬১ এজেন্ট

শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, করোনার এ মহামারির সময় গ্রাহক ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন বেশি নিরাপদ মনে করছে। এছাড়া কোভিডের ক্যাশলেস লেনদেনের বিষয়ে অনেকে পরিচিত হয়েছেন। ফলে মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছেন। লেনদেনও বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ সাত লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের চেয়ে ৩৭ শতাংশ, দুই লাখ আট হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বেশি। গত বছর লেনদেন হয়েছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

তবে এখানে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’-এর তথ্য সংযুক্ত হয়নি। ২০২১ সালে নগদে দুই লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ২০২১ সালে মোট লেনদেন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। নগদসহ এ সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫৪ লাখে।

dhakapost
বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- কেনাকাটার বিল, বেতন কিংবা টিউশন ফি পরিশোধ, মোবাইল ফোনের রিচার্জ সবই সম্ভব এমএফএস সেবার মাধ্যমে

শুধু লেনদেনেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- কেনাকাটার বিল, বেতন কিংবা টিউশন ফিও পরিশোধ করা যাচ্ছে এ মাধ্যমে। এছাড়া, গ্রাহক এখন শাখায় না গিয়ে ব্যাংক হিসাব থেকে লেনদেন করতে পারছে। ব্যাংক ঋণ এমনকি আমানতের অর্থও মোবাইলে পরিশোধ করতে পারছেশামসুদ্দিন হায়দার ডালিম, হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর, বিকাশ

এ বিষয়ে নগদের হেড অব কমিউনিকেশন্স মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দৈনন্দিন লেনদেনে স্বাচ্ছন্দ্য এবং ব্যবহার সুবিধার জন্য মানুষ ধীরে ধীরে মোবাইল আর্থিক সেবার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন এখন ডিজিটাল জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এখন ডিজিটাল স্পেসে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া, কোভিড মহামারি নিশ্চিতভাবে গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

‘দেশের অন্যতম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হিসেবে নগদ এ খাতে বড় অবদান রাখছে। শুধুমাত্র ২০২১ সালে নগদ তিন কোটি ৪০ লাখ নতুন গ্রাহক পেয়েছে। এটি ডিজিটাল পেমেন্ট খাতকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, নগদের আকর্ষণীয় সেবা ও অফার গ্রাহকদের মুঠোফোনে লেনদেনে আগ্রহ বাড়িয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে, নগদের এ নিরন্তন প্রচেষ্টা দেশে ক্যাশলেস (নগদবিহীন) সোসাইটি (সমাজ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় গত বছরের (২০২১ সাল) মে মাসে। ওই মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

ডিসেম্বর মাসে এমএফএস সেবায় ব্যক্তিহিসাব থেকে ব্যক্তিহিসাবে ২০ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার তিন হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।

dhakapost
নির্দিষ্ট কোনো সময়ে নয়, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই অর্থ লেনদেন করা যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে / ছবি- সংগৃহীত 

শুধুমাত্র ২০২১ সালে নগদ তিন কোটি ৪০ লাখ নতুন গ্রাহক পেয়েছে। এটি ডিজিটাল পেমেন্ট খাতকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, নগদের আকর্ষণীয় সেবা ও অফার গ্রাহকদের মুঠোফোনে লেনদেনে আগ্রহ বাড়িয়েছেমুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, হেড অব কমিউনিকেশন্স, নগদ

২০১১ সালের মার্চে দেশে প্রথম মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার কার্যক্রম শুরু হয়। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এ সেবা চালু করে। পরে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘রকেট’। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে ‘বিকাশ’। বর্তমানে এ সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

ডাক বিভাগের ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ‘নগদ’ বাজারে লেনদেন শুরু করে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। বর্তমানে বিকাশ, নগদ, রকেটের পাশাপাশি এম ক্যাশ, উপায়, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোনে আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ - বিজ্ঞান প্রযুক্তি

আপনার জন্য নির্বাচিত