(অবৈধ ভাবে কৃষি জমির মাটি ইট ভাটায়)
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ৩ ফসলি জমিতে পুকুর কাটা হচ্ছে, সেই মাটি বিক্রি হচ্ছে পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ইট ভাটায়। উপজেলা সোনাখারা গ্রামে, রাজু গং ২৫ বিঘা এবং পাশের গ্রাম রুপাখারা গ্রামের আবু তালেব ২০ বিঘা ৩ ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছে। ফসলি জমির মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভূমি আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রায়গঞ্জ সোনাখারা ইউনিয়নের সোনাখারা ও রুপাখারা গ্রাম সহ ভিভিন্ন এলাকায় চলছে ফসলি জমির মাটি কেনাবেচা। দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদি কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইট ভাটা মালিকদের নিকট বিক্রি করছে মাটি খেঁকোরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন হাজার হাজার মাটির ট্রাক ও অবৈধ মাহেন্দ্রা ট্রলি চলার কারণে ধূলা বালুতে আচ্ছন্ন হয়। এতে করে যাতায়াতে মানুষের শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে জনমনে ক্ষোভ। এ অবস্থায় জনগন দিশেহারা হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে এবং হুমকির মধ্যে পরছে হাজার হাজার মানুষ। ধুলাবালির জন্য ছাত্র ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিশু অসুস্থ হয়ে পরছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে উপস্থিতির হার কমছে। ছাত্র ছাত্রীরা জানায় ধূলায় আমাদের জামা কাপর নষ্ট হয়ে যায়, বাড়ীতে পরতে পারি না, দিনে জানালা খুলে পরতে পারি না, ভাত খাইতে পারি না, যার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পরছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ ইট ভাটা মিলে প্রায় ৫৮ টি ইট ভাটার মধ্যে মোট ইট উৎপাদন হয়— ১ শত ৮০ কোটি। উৎপাদিত ইটের কাঁচা মাল হিসেবে ৭০ শতাংশ মাটি। যার অধিকাংশ মাটি নেওয়া হয় রায়গঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। দীর্ঘ দিন জাবত চলছে এ মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। মাটি বাবসায়ি সিন্ডিকেট ও অবৈধ ইট ভাটার মালিক প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অবাধে পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি সহ পরিবেশের ভারসাম্য, জীব বৈচিত্র্য সহ খাদ্য নিরাপত্তা মারাক্তকভাবে হুমকির মুখে পরেছে।
সরকারী গেজেট প্রকাশিত, “মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রন ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন বাক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশে কৃষি জমি হতে মাটি কাতা বা সংগ্রহ করে ইটএর কাচা মাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোন বাক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহলে তিনি অনাধিক ২(দুই) বৎসরের কারাদন্ধ বা ২(দুই) লক্ষ টাকা অর্থ দন্ধ অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যাবহার কারিরা কোন ভারী যানবাহন ইট ও ইটের কাঁচামাল পরিবহন করিতে পারিবেন না।”
যদি কোন বাক্তি আইনের এই ধারা লঙ্গন করেন তা হইলে তিনি ১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এসব আইন থাকার পর ও ভুমি দস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে এসব কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহতি করার পর ও প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে এলাকাবাসীর মনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার ভুক্তভোগীরা বলেন পাশের জমিতে মাটি কাটার ফলে আমদের জমির পাড় ভেঙ্গে যায়। জমিতে সেচের পানি আটকে রাখা যায় না। তাই জমিতে ঠিকমত ফসল ফলানো যাচ্ছে না। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে পূর্বেই অবহিত করেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নাই। আবার মাটি ভরথি ট্রাক ও ট্রলি গুলো নেওয়া হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ফলে রাস্তা গুলো উঁচু নিচু এবং বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।এলাকা ধূলা বালুতে আচ্ছন্ন হয় এতে করে যাতায়াতে নানা শ্রেণীর মানুষের শ্বাস কষ্ট সহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানা যায়।