সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বাড়তি লাভের আশায় সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায় প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করা হয়। তাড়াশ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এখনো রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়নি। তবে সদ্য ফাঁকা হওয়া জমিগুলোতে এখন আগাম আলু চাষ করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। তবে এবার অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়ে এক রকম ঝুঁকি নিয়েই আলু চাষে নামছেন কৃষকেরা। গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশ আশা নিয়েই ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। তাড়াশ উপজেলা জুড়ে ডায়মন্ড, অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল নামে আগাম জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। এ তিন জাতের আলু রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়।
জানা যায়, এ বছর কৃষকেরা বাইরে থেকে আলুর বীজ কিনছেন ৮০-৮৫ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা। এক মৌসমের আগের হিসেবে এই দাম দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া সারের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। অতিরিক্ত সেচ ও কীটনাশক খরচের ফলে উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে অস্বাভাবিক। আগে যেখানে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ব্যয় ছিল ৪০ হাজার টাকা। সেই ব্যয় বেড়ে এখন বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। এবার সরকারি যে আলুর বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে; সেই আলুর বীজ জাতভেদে ৫৭ টাকা থেকে শুরু করে ৬৬ টাকা পর্যন্ত কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বীজ অপ্রতুল। সূত্র জানায়, ২০-২৫ শতাংশ আলুর বীজ উৎপাদন করে বিএডিসি। বাকি আলু কৃষক তাদের ঘরে রাখেন ও বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও ও প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে। সরকারি আলুর বীজ পর্যাপ্ত না হওয়ায় কৃষক বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনে থাকেন। গত বছর আলুর বীজ ৫০-৬০ টাকায় কিনতে পেরেছিলেন। যা আগের মৌসুমে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। তবে সেই বীজ এবার ৮০-৮৫ টাকা পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে।
সারের বিষয়ে জানা যায়, ডিলাররা ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকায় কেনেন কিন্তু বিক্রি করেন ১৩৫০ টাকায়। ডাই-অ্যামনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সরকারি মূল্য ৯৫০ টাকা হলেও বিক্রি হয় ১০৫০ টাকায়। মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সরকারি মূল্য ৯০০ টাকা হলেও ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইউরিয়া সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকা হলেও ১৩৫০ টাকায় চাষি পর্যায়ে বিক্রি করেন। কিন্তু কৃষককে তিউনেশিয়ার ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ১৭০০ টাকা এবং দেশি ২২০০ টাকা, ডাই-অ্যামনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) মরক্কো ১১০০ টাকা ও দেশি ১৫০০ টাকা, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) কানাডা ১২০০ টাকা ও রাশিয়া সরকারি মূল্যেই কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনো ডিলারই ভাউচার দিচ্ছেন না। ভাউচার চাইলে সার দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। কৃষকেরা বলছেন, গত দুই মৌসুমে আলুর দাম ভালো দেখেই এ বছর তারা বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের ঝুঁকি নিচ্ছেন। তবে সরকারি রেটে বীজ, সার ও কীটনাশক পেলে তাদের উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হতো। সঠিক বাজারমূল্য না পেলে পুঁজি হারাতে হবে। মাধাইনগর ইউনিয়নের একজন কৃষক রফিকুল বলেন, ‘গত বছর আলুর বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়ে খরচ দ্বিগুণ হয়েছিল। তবে এ বছর খরচ আরও বেড়েছে। যদি গতবারের মতো দাম না পাই, তাহলে এবার মাঠেই মরতে হবে।’
মাধবপুর গ্ৰামের এরশাদ আলী বলেন, ‘গত এক বছর আগেও ৫০ শতক জমিতে আলুর খরচ হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। গত বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। তবে এ বছর একই জমিতে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকা। প্রতি বছর আলু চাষ করি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও করলাম। ভালো বাজার নিয়ে আমি খুবই শঙ্কায় আছি।’ তবে কৃষি অফিস বলছে, আলুর ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেইসাথে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে আলুর ভালো ফলনে আশাবাদি কৃষি বিভাগ।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেন, ‘আমরা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আলু চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। তাড়াশ উপজেলার মাটি ও প্রকৃতি আলুর জন্য যথেষ্ট উপযোগী। তবে এবার উৎপাদন ব্যয় বেশি। আশা করি সঠিক বাজারমূল্যের মাধ্যমে কৃষকেরা খরচ তুলতে সক্ষম হবেন।’