মোঃ হামজা শেখ, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে তৈরি করা মডেল ঘরে সুফল পাচ্ছে কৃষকেরা।কৃষি অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এসব ঘরে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের পাশাপাশি চলতি বছরে বেশি দামে বিক্রির করছেন চাষিরা।
বছরের শুরুতে জেলার কালুখালী উপজেলায় ২০টি এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করে কৃষকদের কাছে হস্তান্তর করে রাজবাড়ীর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।যেখানে ১৫ হাজার মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছিলেন কৃষকেরা।
মডেল ঘর পাওয়া বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,আমি প্রতিবছর ৮ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ লাগাই।চারচালা টিনের ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতাম। বেশিরভাগ পেঁয়াজই নষ্ট হয়ে যেত। গত বছর সরকার থেকে ঘর পেয়েছিলাম। আমিসহ আমার ভাই এই ঘরে প্রায় ৪শ মণ পেঁয়াজ রেখেছিলাম। অক্টোবর মাস থেকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছি। এখনো কিছু পেঁয়াজ ঘরে আছে।এবছর আমার একটা পেঁয়াজও নষ্ট হয় নাই।ভালো দামও পাইছি।
কথা হয় একই ইউনিয়নের চর-দক্ষিণবাড়ি এলাকায় কৃষক গোলাম মোস্তাফা বলেন, গত মৌসুমের শেষের দিকে এই ঘর পেয়েছিলাম। তারপরও প্রায় ৪শ মণ পেঁয়াজ রেখেছিলাম। গত মাসে বিক্রি করে শেষ করেছি।আমার ঘরের একটা পেঁয়াজও নষ্ট হয় নাই।দামও ভালো পাইছি।এক ঘরে আমি আমার ছেলে ও ভালো ভাগাভাগি করে পেঁয়াজ রেখে ছিলাম। তবে আরও ঘর যদি বাড়িয়ে দিতো তাহলে ভালো হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা এ ঘরে ছয়টি তাপ নিয়ন্ত্রণ ফ্যান ও তিন স্তরের মাচা রয়েছে।চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা প্রতিটি ঘরে সংরক্ষণ করা যায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ পেঁয়াজ। প্রতিটি ঘরে আলাদা আলাদা স্তরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন অন্তত পাঁচ কৃষক। এ ঘরে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকে।
মাঠ কর্মকর্তা জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মোঃ রাজিব খান বলেন, মডেল ঘরে পেঁয়াজ রেখে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন; যা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রত্যেক কৃষককে তো আর ঘর তৈরি করে দেওয়া যাবে না।ঘরগুলো তৈরির আরেকটি উদ্দেশ্য হল, কৃষকরা যেন এই ঘর দেখে নিজেরাই তৈরি করতে করেন। এতে যেমন পেঁয়াজ নষ্ট হবে না পাশাপাশি তারা সুবিধামত সময়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি বছর উৎপাদন করা পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।এসব ঘর নির্মাণের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।